অমানবিক টিউশন ফি

শফিউল আল শামীম |

মৌমিতা এ বছর একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করায় ঢাকা শহরের খ্যাতনামা কলেজগুলোকে পছন্দের তালিকায় প্রথমে রেখেছিল। অনলাইন পদ্ধতির যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পর তার ভাগ্যে ভালো কলেজই জুটল। তার সাফল্যে পরিবারের সবাই খুব খুশি, সেও আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল। কিন্তু তাদের হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। নিমিষেই তা বিস্বাদে পরিণত হলো। কারণ ভর্তির দিন জানতে পারল, সে যে কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছে সেটির মাসিক টিউশন ফি মোটামুটিভাবে তার পরিবারের সকল সদস্যের ভরণপোষণের খরচের সমান। আর ভর্তি বাবদ যা খরচ হবে তাতে তাদের এক বছর অনায়াসে চলে যাবে। মৌমিতা সেদিন আর কলেজে ভর্তি হয়নি। মনের চাপা কষ্টে পাথর হয়ে সে বাড়ি ফিরে এসেছিল।

শুধু মৌমিতা একা নয়। এরকম হাজারো শিক্ষার্থী আছে, যাদের স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। মনের ভিতর লালন করা স্বপ্নগুলোকে একদিন তাদের এভাবেই বিসর্জন দিতে হয়। এর পেছনে যে কারণটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে তা হলো অমানবিক টিউশন ফি। আমাদের দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে এটা আমরা দেখতে পাই।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকা শহরেও একজন নার্সারি পড়ুয়া বাচ্চার পেছনে স্কুলের টিউশন ফি বাবদ অভিভাবকের বার্ষিক খরচ হয় ১ লাখ টাকারও বেশি। শ্রেণিভেদে তা দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকী চারগুণও হয়ে থাকে। যা নিতান্তপক্ষে ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। প্রতিটি পরিবারের পক্ষে এমন খরচ চালানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। যার বদৌলতে অনেককেই মাঝপথে এসে ঝরে পড়তে হয়। বিশেষ করে মেয়েরা এই বলির শিকার হয় বেশি এবং বাধ্য হয়েই বাল্যবিবাহকে বরণ করে নিতে হয় তাদের। আর এই কারণেই নারীরা এখনো পিছিয়ে আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন একেকটি টাকার কূপ। একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে পদে পদে টাকা ঢালতে হয় এখানে। অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত সার্টিফিকেট সময়মতো হাতে আসে না।

অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এসবের ভিন্ন চিত্র বিরাজমান। পাশ্চাত্যসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি ব্যয় করে। প্রতিবেশী দেশ ভারত করে তাদের জিডিপির ৩.৫ শতাংশ। অথচ আমাদের শিক্ষাখাতে বাজেটের পরিমাণ দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাখাতে সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। টাকার অঙ্কে হিসেবটা বড় হলেও জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিকের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে শিক্ষাখাতে ব্যয় আমাদের জিডিপির মাত্র দুই শতাংশ। যা এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিগত বছরগুলোতেও শিক্ষার জন্য বরাদ্দ ছিল আমাদের মোট বাজেটের ১০-১২ শতাংশের মধ্যে। যা শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যয়ের সমান ছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট কম হওয়ায় টিউশন ফি বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। তাই শিক্ষাখাতকে সমৃদ্ধ করতে হলে এখাতে মোট বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবকাঠামো, প্রযুক্তি এবং পাঠদানে উন্নত করতে হবে। আমাদের ব্যবসায়ী শ্রেণিকেও কিছুটা সহানুভূতিশীল হতে হবে। শিক্ষাকে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণে সীমাবদ্ধ না রেখে মানবিক দিক থেকেও বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়। তাহলে মৌমিতার মতো সম্ভাবনাগুলো তাদের স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারবে। দেশও এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।

 

ঢাকা কলেজ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034210681915283