জবিতে ছাত্র নামধারী ছিনতাইকারী!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা! অন্য হাজারো শিক্ষার্থী যখন ক্লাস আর পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত, তখন কতিপয় শিক্ষার্থী থাকে অন্যের পকেট খালি করার ধান্দায়। এদের মধ্যে আবার নবাগত শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরাই এর শিকার হচ্ছে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ এদের মদদ দিচ্ছে—এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাদের আরো অভিযোগ, ঘটনাগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবহিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা দ্বিতীয় ফটক এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ঘটছে ছিনতাইয়ের এসব ঘটনা। ক্লাস চলা অবস্থায়ই ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। স্বভাবতই এসব ঘটনা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা মাঝেমধ্যেই হেনস্তার শিকার হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কিছু কর্মী এসব ছিনতাইয়ে মদদ দিচ্ছে। তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি সবার জানা। কিন্তু প্রশাসন উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর ফলে সংশ্লিষ্টরা ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বারবার ঘটানোর সাহস পাচ্ছে। ফারুক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস, কাঁঠালতলা, নতুন একাডেমিক ভবনের আশপাশসহ বিভিন্ন স্থানে হয়রানিমূলক নানা ঘটনার সঙ্গেও জড়িত।

জানা যায়, ছিনতাইয়ে জড়িতরা প্রথমে এক বা দুজনকে টার্গেট করে। এরপর যেকোনো অছিলায় ঝগড়া বা কথা-কাটাকাটির পথ তৈরি করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে দলের অন্যরা এসে মারধর করে মোবাইল ফোনসেট, মানিব্যাগসহ দামি জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। কয়েক সপ্তাহ আগে এমন ঘটনার শিকার হওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১১তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি, বন্ধু তাজনুর ও মুশফিক দ্বিতীয় গেটে অস্থায়ী ভাতের হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে যাই।

হাত ধোয়ার সময় পাশে বসে থাকা একজনের পায়ে পানির ছিটা লাগে। এ ঘটনার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই দুঃখ প্রকাশ করি। এর পরও সে আমাকে গালাগাল করতে থাকে। আমি সিনিয়র পরিচয় দিলে সে আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এভাবে কথা বলতে বলতে আরো কয়েকজন এসে হাজির হয়। এরপর ওরা আমাদের কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক ফাঁকে তারা আমার মানিব্যাগ নিয়ে যায়।’

ছাত্রলীগকর্মী ফরহাদ বলেন, ‘ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন রাসেলের কর্মী। তবে এসব ছিনতাইকারীকে ছাত্রলীগের কোনো গ্রুপই সঙ্গে রাখতে চায় না। কারণ এরা শুরু থেকেই বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি খারাপ করছে। এদের মধ্যে ফিন্যান্স বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিকদার তৌশিক আহমেদ তূর্য, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুহাদ মজুমদার, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিয়াজ উদ্দিন হৃদয়, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আল সাদিত জিয়ন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহিন খান শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের কর্মী। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, ‘ছিনতাইয়ের বিষয় দেখা আমাদের কাজ না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে, প্রশাসনই ব্যবস্থা নেবে। আমার সঙ্গে কোনো ছিনতাইকারী নেই। গত কয়েক দিনেও তারা আমার সঙ্গে ছিল না। সবাইকে বলে দিয়েছি, কোনো চোর-বাটপারের ঠাঁই ছাত্রলীগে নেই।’

গত ২০ জানুয়ারি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সায়েদ জানান, চলতি মাসের ১৭ তারিখ রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতর বাসা ভাড়ার টু-লেট লাগানোর সময়, বাসা ভাড়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁকে মারধর করে মোবাইল ফোনসেট ও মানিব্যাগ নিয়ে যায় ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌশিক তূর্যসহ আরো দুজন। ২১ জানুয়ারি মার্কেটিং বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর চৌধুরী সাকিল তাঁকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা চাইলেই শুরুতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তাই কম সাজা দিয়ে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

সূত্র:কালের কন্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035789012908936