ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে হৃদয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা নেত্রকোণার হৃদয় সরকারকে প্রতিবন্ধী কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতদিন শুধু বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এ কোটা সংরক্ষিত থাকলেও এখন থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পাবেন।

বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২ হাজার ৩৭৮টি আসনের বিপরীতে হৃদয়ের মেধাক্রম ছিল ৩ হাজার ৭৪০তম।

তিনি মেধায় সুযোগ না পেলেও কোটায় সুযোগ পাবেন বলে সে সময় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। তবে ভর্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অফিসে এসে হতাশ হন হৃদয়। শুধু ‘বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি’ প্রতিবন্ধীদের কোটায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকায় তিনি এর কোনোটির মধ্যে পড়ছিলেন না।

চলচ্ছক্তিহীন হৃদয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার প্রেক্ষিতেই ডিনস কমিটির সভায় শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে হৃদয়কে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় বলে মাকসুদ কামাল জানান।

তিনি বলেন, “ওকে ভর্তি করানোর বিষয়ে এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগে তো বাক, শ্রবণ আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভর্তি করানো হত। কিন্তু এখন থেকে এর সাথে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিষয়টিও যোগ করা হয়েছে৷ কেউ যদি মেধাতালিকায় থাকে এবং কোটায় ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা থাকে তাহলে তারা ভর্তির সুযোগ পাবে। আগামীবার থেকে এটা কার্যকর করা হবে।”

 পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার পর এই প্রতিবেদকের কাছে হৃদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি ও তার মা সীমা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।

অজানা রোগে জন্ম থেকেই চলচ্ছক্তিহীন হৃদয় স্কুল থেকে কলেজ, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা- সবখানেই মায়ের কোলে চড়েই গেছেন। আর তার এই যুদ্ধে সব সময় শক্তি যুগিয়েছেন মা সীমা সরকার।

সমীরণ সরকার ও সীমা সরকারের দুই সন্তানের মধ্যে বড় হৃদয় নেত্রকোণার আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও নেত্রকোণা জেলা স্কুল থেকে জিপিএ ৪.০৬ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মায়ের কোলে হৃদয়ের ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করার অল্প সময়ের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। আর হৃদয় জয় করে নেন অসংখ্য মানুষের হৃদয়।

সে সময় তিনি বলেছিলেন, “আমার এই ফলাফলের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। সেই ছোট থেকেই তিনি আমাকে কোলে করে স্কুল-কলেজে নিয়ে যান। তিনি আমাকে কোনো দিন হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে দেননি। তিনি বলেন, যতদিন তিনি বেঁচে আছেন, যতদিন সামর্থ্যে কুলায়, তিনি আমাকে কোলে করেই নিয়ে যাবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025999546051025