‘নখদন্তহীন’ শিক্ষা আইন চূড়ান্ত হচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

education lawকোচিং, নোট-গাইডসহ শিক্ষায় বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে দুর্বল বিধান রেখে শিক্ষা আইন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কোচিং ও প্রাইভেট টিউশন ব্যবসা প্রতিরোধে শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো রকম শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। এমনকি শিক্ষকের যৌন হয়রানির মতো ফৌজদারি অপরাধের ঘটনায় জেল-জরিমানা নয়, কেবল এমপিও কেড়ে নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

শিক্ষকরা ক্লাসে ঠিকমতো না পড়ালে বা ক্লাস ফাঁকি দিলে কী শাস্তি হবে- সেই নির্দেশনাও নেই এতে।

প্রশ্ন ফাঁস অপরাধের শাস্তিও কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এভাবে শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে যেখানে শিক্ষকদের দায় আছে, সেখানে তাদের অনেকটাই ‘ছাড়’ দেয়ার প্রবণতা রয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই খসড়াকে ‘নখদন্তহীন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দৈনিকশিক্ষার সঙ্গে আলাপকাল গতরাতে তিনি এই মন্তব্য করেন।

খসড়ায় দেখা যায়, শিক্ষক ছাড়া অন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে জেল-জরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ করে নোট-গাইড ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে একটি অপূর্ণাঙ্গ ও দুর্বল আইন চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাবিত আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

২৫ পৃষ্ঠার এ আইনের খসড়ায় সর্বমোট ৬৯টি মূলধারাসহ বেশকিছু উপধারা আছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষক নিয়োগ, পাঠ্যবই, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব বিধান লংঘনের দায়ে অর্থদণ্ড, কারাদণ্ড এমনকি উভয় দণ্ডের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইনের খসড়ায় নোট-গাইড বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের গ্রন্থ প্রকাশ করে তাহলে ২ লাখ টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে।

কোনো পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস বা এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার জন্য সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এর আগে গত অক্টোবরে শিক্ষা আইনের খসড়ার ওপর মতামত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতেও প্রশ্ন ফাঁসের শাস্তি ৪ বছর রাখার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তা নিয়ে সমালোচনা উঠেছিল।

তখন এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘শিক্ষা আইনের প্রস্তাবিত শাস্তি নতুন কিছু নয়। এ বিষয়ে ১৯৯২ সালের আইনে যা ছিল তাই রাখা হয়েছে। এর কমবেশি করলে ওই আইনের সঙ্গে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে। তাই শাস্তি বাড়াতে হলে এ সংক্রান্ত মূল আইন আগে সংশোধন করতে হবে।’

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, নিবন্ধন ব্যতীত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনা করা যাবে না। জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান, অনগ্রসরতা, দূরত্ব বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এ বিধান লংঘন করলে মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা দণ্ড অথবা ছয় মাসের কারাদণ্ডের শাস্তি রাখা হয়েছে।

ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। এ বিধান লংঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছরের কারাদণ্ডের শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন শিশুকে কোনো প্রকার মানসিক নির্যাতন বা শারীরিক শাস্তি প্রদান করা যাবে না। এ বিধান লংঘনের শাস্তি হিসেবে অনধিক দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা তিন মাসের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে একজন ব্যক্তি দুটির বেশি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হতে পারবেন না। ব্যবস্থাপনা কমিটির জন্য আলাদা বিধি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টিও রাখা হয়েছে। বর্তমানে একজন ব্যক্তি চারটি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত কিংবা মনোনীত হতে পারেন। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।

উচ্চশিক্ষা স্তরের সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

এ জন্য একটি ‘রেগুলেটরি কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

গাইড বই ও নোট বই নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সহায়ক পুস্তক প্রকাশ করা যাবে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) যেসব কারণে বাতিল হতে পারে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে : শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা না রাখা, ভুয়া তথ্য প্রদান, অসদুপায় অবলম্বন, অনুমোদিত নয় এমন বই অনুসরণ, প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী কোনো কার্যক্রম প্রমাণিত হওয়া, নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ইত্যাদি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033719539642334