বেশি পাসের নেপথ্যে..

মোবাশ্বের হাসান |

Editorial-240পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বেশি পাস করানোর নেপথ্যে রয়েছে নানা জাদুমন্ত্র! মূল্যায়নের জন্য খাতা দেওয়ার আগে পরীক্ষকদের কানে কানে বলে দেওয়া হয়েছে সেই মন্ত্র। এক ক্লিকে সবাইকে গ্রেস নম্বর দেওয়ার জন্য বোর্ড অফিসে রয়েছে আধুনিক যন্ত্র।

এছাড়াও বোর্ড চেয়ারম্যান পদে টিকে থাকার জন্য বোর্ডে বোর্ডে চেয়ারম্যানদের মধ্যে রয়েছে পাসের হার বাড়ানোর ‘অসুস্থ’ প্রতিযোগিতা!

পাসের হার ও জিপিএ ফাইভ বাড়ানো কমানোর তন্ত্র-মন্ত্র আর যন্ত্রের কার্যকারিতা ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষাডটকম। একইসঙ্গে অনুসন্ধানও করে আসছে পাস-ফেল ও জিপিএ ফাইভ পাওয়া-দেওয়ার নেপথ্য ঘটনাবলী। শিক্ষা বিষয়ক সংবাদ ও নানাবিধ তথ্য-উপাত্তের সবচেয়ে বড় আর্কাইভ রয়েছে দৈনিকশিক্ষাডটকমের।

শুধু দৈনিকশিক্ষাই নয়, হঠাৎ পাস-ফেল বাড়ানো-কমানোর বিষয়টি তদন্ত ও অনুসন্ধান করেছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম ‘নিয়ন্ত্রকারী’ আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। তাদের অনুসন্ধানেও প্রমাণ হয়েছে পাস-ফেলের পেছনে থাকে ‘ওপরের’ নির্দেশ আর পরীক্ষকদের ‘তন্ত্র-মন্ত্রের’ কাহিনী।

অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, পাঠ্যবইয়ে কোনও পরিবর্তন হয়নি, সিলেবাসেও না। হঠাৎ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের গুণগতমান ভালো বা খারাপ হয়ে যায়নি তবুও পাসফেলের হারে কেন এত হেরফের। পরীক্ষকদের মৌখিক নিদের্শেণা দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে দেশি-বিদেশি তদন্ত ও অনুসন্ধানকারীরা। দৈনিকশিক্ষার হাতে রয়েছে ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদনের কপি।

দৈনিকশিক্ষার গবেষণায় জানা গেছে, গত চার-পাঁচ বছরের মতো এবারেও পরীক্ষকদের প্রতি কতিপয় মৌখিক আদেশ ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষকদের এই মর্মে মন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে যে, প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা কোনও পাবলিক পরীক্ষা নয়। সবার পাস করার ও ওপরের ক্লাসে ওঠার অধিকার  রয়েছে!

আরও বলা হয়েছে, ‘হে পরীক্ষকগণ আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনি পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে ফেল করালেন তো তার শিক্ষাজীবন শেষ করে দিলেন! সবাই পাসের এই যুগে কেউ ফেল করা মানে প্রতিষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর নি¤œমেধার স্বীকৃতি দেওয়া। সুতরাং কোমলতি শিশুকে কোনওভাবেই ‘ফেলের’ তকমা দেওয়া যাবে না।

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকগণ মূল্যায়ণের জন্য পরীক্ষার খাতা বিতরণকালে শিক্ষাবোর্ডগুলোর বড় কক্ষে ঘোষণা দেন,  ‘হে পরীক্ষকগণ একটি খাতা ফেল মানে আবার ওই খাতা চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ মানে আবার শিক্ষা বোর্ডে যাতায়ত। আবার নম্বর গণনা। সুতরাং বালা দূর করুন, উদারভাবে নম্বর প্রদান করুন।’

‘হে পরীক্ষকগণ শ্রেণি পরীক্ষায় যেভাবে সবাইকে পাস করানোর মন্ত্র থাকে ঠিক একই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পিইসি, এবতেদায়ি ও জেএসসি-জেডিসির খাতা মূল্যায়ণ করতে হবে।’ ‘জেএসসি বা জেডিসি কোনও পাবলিক পরীক্ষা নয়।’

দৈনিকশিক্ষাডটকমের হাতে রয়েছে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার এমন কয়েকটি খাতার ছবি যেগুলোতে ফেল নম্বর দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না বিবেকবান পরীক্ষকের। যদিও তাদেরকে পাস দেখানো হয়েছে। আজ তারা ভি চিহ্ন দেখিয়ে বাড়ি ফিরবেন!

দৈনিকশিক্ষার হাতে রয়েছে পরীক্ষকদের বক্তব্যের অডিও-ভিডিও। যেখানে রয়েছে বিবেকবান পরীক্ষকদের আর্তনাদ। তারা আর খাতা মূল্যায়ন করতে চাইছেন না। কারও কারও মতে সাত অথবা ১০ পাওয়া পরীক্ষার্থীকে প্রধান পরীক্ষকের নির্দেশে ৩৩ দেওয়ার পর শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলার গর্ব করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলছেন।

খাতা মূল্যায়নে অপরাগতা প্রকাশ করায় অনেকেই নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন ইতোমধ্যে।

কতিপয় অনুগত সংবাদকর্মী যখন প্রচার করেন, মন্ত্রীদের পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ পাশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণী বক্তব্য তখন বিবেকবান পরীক্ষকদের মনে আসে শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সেই বিখ্যাত উক্তি “অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেন কিন্তু বাংলাদেশে মেধাবীরা বিলাতকেও হার মানায়! ফেলের হার মোটের ওপর ২ শতাংশ!”

লেখক : মোবাশ্বের হাসান, সাংবাদিক, দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব গবেষক ও শিক্ষা বিশ্লেষক।



পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032720565795898