সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের হুমকি শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চলতি মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী ২ জানুয়ারি কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কঠোর কর্মসূচি বলতে তারা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

আজ রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এ হুমকি দেন।

সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলসহ বিভিন্ন দাবিতে গত আট মাস ধরে আন্দোলন করছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর মতোই সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে। এ ছাড়া তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে জ্যেষ্ঠ সচিবদের যে জায়গায় রাখা হয়েছে সেই জায়গায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করা হবে। কিন্তু প্রকাশিত বেতন কাঠামোয় এর প্রতিফলন ঘটেনি।

বরং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হলে গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা আগের চেয়ে অর্ধেক কিংবা আরও নিচে নেমে আসতে পারে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সেটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ১৯৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের সরাসরি পরিপন্থী।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে সুস্পষ্ট আশ্বাস পেয়েছিলাম কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা প্রতারিত হয়েছি। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আর কিছু সম্ভব নয়। এখন কঠোর আন্দোলনে ছাড়া উপায় নেই।

এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চান কঠোর আন্দোলন বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন? এ সময় তিনি বলেন, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ (Completely Shut Down) হয়ে যেতে পারে। তিনি এ সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কয়েক দিন আগে সভা করে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তারাও মনে করেন অর্থমন্ত্রী নিজে থেকে সরে গেলেই মঙ্গলজনক। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য তাঁকে (অর্থমন্ত্রী) সরিয়ে দেবেন।

তিনি আরও বলেন, আজ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ কর্মবিরতিও চলছে।

মাকসুদ কামাল বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আটমাসব্যাপী এই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন আজ ক্সধর্যচ্যুতির শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
এমতাবস্থায়, ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে আক্রণাত্মক বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এরূপ বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চলমান স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

২. অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক তৈরি করা বিতর্কিত পরিপত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই ধরনের পরিপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়গণকে আমাদের প্রেরিত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে আমরা বিনীত অনুরোধ করছি।

৩. চলতি মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অর্থমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

৪. জাতির জনকের সৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩- এ কোনো অশুভ হস্তক্ষেপ না করার অনুরোধ করছি।

মাকসুদ কমাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্থান শ্রেণিকক্ষ; প্রাণশক্তি প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী। তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করে আমরা কোনো কঠোর আন্দোলনে ইতঃপূর্বে যাইনি। আমাদের বিশ্বাস ছিল আলাপ-আলোচনা ও প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিসমূহ পূরণে সক্ষম হবো। কিন্তু বাস্তবে তা এখনও হয়নি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সকল আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক; শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে বরাবরের মতো আমরা তাঁর দ্রুত হস্তক্ষেপ ও শুভাশিস কামনা করি।



পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003216028213501