কান্না ধরে রাখতে পারলেন না মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন।
সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কমচারীর অভিভাবকের পদে আসীন ফাহিমা মূলত: বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষক।
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি থেকে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা ফাহিমা কান্নাভেজা কন্ঠে শুক্রবার বলেন, “আমলাদের (প্রশাসন ক্যাডারের) নানা ছলচাতুরির কারণে মাউশি অধিদপ্তরের নিয়মিত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেলাম না। যদিও এই পদে আমার তিন বছর অতিক্রান্ত হলো। এটা লজ্জার, কষ্টের।”
“নিয়মিত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আমার প্রস্তাবনার ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল । কিন্তু ১২ টি প্রশ্নের জবাব চেয়ে ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে, এর চেয়ে লজ্জার কী আছে? শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদে আসীন আমি, অথচ নিয়মিত নই, চলতি দায়িত্বে।”
সংক্ষুব্ধ মাউশি মহাপরিচালক আজ শুক্রবার প্রকৃচি- বিসিএস সমন্বয় কমিটির সাথে বিভাগীয় সংস্থা প্রধান ও এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভায় আবেগাপ্লুত হয়ে উক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
তিনি বলেন, কতিপয় আমলার জাঁতাকলে পিষ্ট অন্যান্য ২৬ ক্যাডারের মতো বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারও। কয়েকমাস পরেই ফাহিমার অবসরে যাওয়ার কথা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিকাল ৪ টায় সভা শুরু হয়। প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভাগীয় সংস্হা প্রধান ও এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় উপস্থিত শিক্ষা ক্যাডার সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানান, মাউশি’ র মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন, সমিতির সভাপতি প্রফেসর নাসরীন বেগম, নায়েমের ডিজি প্রফেসর হামিদুল হক, প্রফেসর মাসুমে রব্বানী খান, এনসিটিবি’ র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর রতন সিদ্দিকী, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান এর পক্ষে বোর্ড সচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী, কুদ্দুস শিকদার ও মনিরা বেগম ( আন্না) প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন।
আবেগাপ্লুত ফাহিমার কান্নার খবর নিশ্চিত করেন উপস্থিত কয়েকজন। সমন্বয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে বক্তৃতাকালে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
সমন্বয় কমিটির সভায় গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রির নির্দেশে মূখ্য সচিব জনাব আবুল কালাম আজাদ, অর্থের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও শিক্ষা সচিব জনাব মো : সোহরাব হোসাইন এর সাথে আলোচনার বিষয়বস্তু অবহিত করেন। দপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন প্রস্তাব ৭ দিনের মধ্যে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের অনুরোধ করা হয়।
১১ জানুয়ারি হতে ১৭ জানুয়ারি ‘১৬ ঘোষিত কর্মসূচি দুপুর ১২ টা হতে ২ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি সফল করার জন্য দপ্তর প্রধানদের অনুরোধ করা হয়।
সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে । শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। তারা সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন আবার শিক্ষা প্রশাসনের পদগুলোতেও বিধি মোতাবেক তাদের বসানো হয়।
সরকারি কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করার শিক্ষকদের উপকার হয়নি বরং ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন প্রবীণ শিক্ষকরা।
নামমাত্র ক্যাডার পরিচয় দেওয়া যায় কাজের কাজ কিছুই না। সকল চাবিকাঠি প্রশাসন ক্যাডারদের হাতে।
ক্যাডারভুক্ত করার আগে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বেতন ও সুবিধা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চেয়েও বেশি ছিল।
গত কয়েকবছর যাবত বি সি এস পররাষ্ট্র ক্যাডার, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস ইত্যাদির জন্য চেষ্টা করেও যারা মেধার লড়াইয়ে হেরে যান শুধু তারাই সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পদে যোগ দেন। এদেরকে ‘বাইচান্স’ শিক্ষক বলা হয়।
আবার যোগ দিয়েই উপ-সচিব হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন অনেকে।