অগ্রণী ব্যাংকের অবহেলায় বরগুনার তালতলী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টাকা সেকায়েপ প্রকল্পের হেড অফিসে ফেরত গেছে। সময়মতো উপবৃত্তির টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেক শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই-ডিসেম্বর ৬ মাসের ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ টাকা বরাদ্দ করেছিল।
তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই-ডিসেম্বর মাসের তালতলী উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৮ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির ১ হাজার ৩শ’ ৩৮ জন শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৬ লাখ ২২ হাজার ৯শ’ ৭০ টাকা ২৯ ডিসেম্বর অগ্রণী ব্যাংক তালতলী বাজার শাখায় প্রেরণ করেন।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারী সেকায়েপ এর অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই বরাদ্দকৃত টাকা পিওএস মেশিনে ব্যবহৃত ক্যাশকার্ডের মাধ্যমে ১২ জানুয়ারীর মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করে প্রকল্প দপ্তরে রিপোর্ট দাখিল করার জন্য ব্যাংকের শাখা ম্যানেজারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট শাখা ম্যানেজার ঐ বরাদ্দকৃত টাকা ৬ জানুয়ারী গ্রহণ করেন যার আইবিসিএ নং ০৩৫৭৬০৬। ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার মো. শাহ আলম শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরনের পিওএস মেশিনের চার্জার নষ্টের অজুহাত দেখিয়ে প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশের সাড়ে ৩ মাসেও ঐ টাকা বিতরণ করেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বার বার তাগাদার কারণে ১৮ এপ্রিল ক্যাশকার্ড ছাড়াই পূর্বের সনাতন পদ্ধতিতে চেকের মাধ্যমে নয়াভাইজোড়া বিএনএ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তালুকদারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬৮জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৭৬ হাজার ৩৫০টাকা বিতরণ করা হয়। ক্যাশকার্ড ছাড়া চেকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণের খবর তাৎক্ষনিক সেকায়েপ’র হেড অফিসে জানতে পেরে টাকা বিতরণ না করে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। সে কারণে ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার মো. শাহ আলম এর ৯ আগস্ট স্বাক্ষরিত এক পত্রে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ টাকা সেকায়েপ-এ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
লাউপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. গোলাম হায়দার জানান, সেকায়েপ এর ৬ মাসের উপবৃত্তির টাকা অগ্রণী ব্যাংক তালতলী শাখার ম্যানেজারের গাফেলতিতে ফেরত যাওয়ায় এ অঞ্চলের দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে নিয়োজিত একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু জানান, তাদের অফিস থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার পিওএস মেশিনের চার্জার নষ্টের অজুহাত দিয়ে টাকা বিতরণ করেনি।
অগ্রণী ব্যাংক তালতলী বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম জানান, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণের পিওএস মেশিনের চার্জার নষ্ট থাকার কারণে যথাসময়ে টাকা বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, পুরাতন পদ্ধতিতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের চাইতে বিকাশের মাধ্যমে বিতরণ করলেই ভালো হয়।
শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, বিকাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য আমরা শিগগিরই সেকায়েপের কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন জানাবো।