অন্যদের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের দূরত্ব বাড়বে

আশরাফুল হক রাজীব |

বর্তমানে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যুগ্ম সচিবরা সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা পান। এখন এ সুযোগ পাবেন উপসচিবরাও। গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসংক্রান্ত গেজেট জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সরকারের উপসচিবদের সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি ব্যবহারের প্রাধিকার প্রদান করা হইল।’

এ সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের ব্যয় এবং বিভিন্ন ক্যাডারের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের দূরত্ব বাড়বে। একই সুবিধা সমমানের কর্মকর্তাদের না দেওয়া হলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

যুগ্ম সচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ি দেওয়ার কথা সরকারের। কিন্তু তা নিশ্চিত করতে পারে না যানবাহন অধিদপ্তর। এ কারণে যুগ্ম সচিবরা সরকারি গাড়ি না নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ভাতা দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। একসময় তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বর্তমানে ‘গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালার’ আওতায় তাঁরা বিনা সুদে ২৫ লাখ টাকা ঋণ পান। সেই সঙ্গে গাড়ি চালনার জন্য প্রতি মাসে দেওয়া হয় ৪৫ হাজার টাকা। এই বিপুল পরিমাণ ভাতাই উপসচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের প্রাধিকার পেতে উৎসাহিত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাঁদেরও গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে।

বর্তমানে প্রশাসনে উপসচিব রয়েছেন এক হাজার ৫৩৯ জন। এমনিতেই সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ অন্যদের গাড়ি সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সংস্থাটি গঠনের দীর্ঘদিন পরও এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হচ্ছে প্রায় দেড় সহস্রাধিক কর্মকর্তার গাড়ি।

আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। এর পরই রয়েছে জনপ্রশাসন। জনপ্রশাসনে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৫৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। জনপ্রশাসনের এই ব্যয় প্রতিবছরই বাড়ছে। গত বছর সরকারি কর্মচারিদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বৈশাখী ভাতা। বেতন ও ভাতা বাড়ানোর বছর না ঘুরতেই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাঁদের বেতন সমন্বয় করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে (সংস্কার ও সমন্বয়) প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই অবস্থায় উপসচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেতন, ভাতা, নতুন বোনাসসহ নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও সরকারি অফিসে কাজের মান বাড়েনি, কমেনি ঘুষ, দুর্নীতি।

উপসচিবরা সরকারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা। কোনো কোনো দপ্তরের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা গাড়ি সুবিধা পান। কিন্তু তাঁদের তা দেওয়া হয় পরিদর্শনকাজের জন্য। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পুলিশ, খাদ্য অধিদপ্তরের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা সে সুবিধা পান। সচিবালয়, বিভিন্ন অধিদপ্তর বা বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কক্ষে বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সার্বক্ষণিক গাড়িসেবা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

উপসচিবদের গাড়ি দেওয়া হলেও বিভিন্ন দপ্তরের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা এ সুবিধার বাইরে থাকছেন। বিভিন্ন সেক্টরে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তার সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। ২০১২ সাল থেকে সরকার গাড়ি সুবিধা গ্রহণের পরিবর্তে বিশেষ সুদমুক্ত অগ্রিমের মাধ্যমে গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা করে। এর আওতায় যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবদের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য ঋণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা, যাঁরা যুগ্ম প্রধান এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফটিং) তাঁদের এ সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু অবশিষ্ট ২৭টি ক্যাডার এর বাইরে রয়ে গেছে। এ নিয়ে কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্যাডারে মারাত্মক ক্ষোভ রয়েছে।

উপসচিবরা দীর্ঘদিন থেকেই সরকারের কাছে সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা প্রাধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে কর্মরত থাকার সময় তাঁদের ভালো মানের গাড়ি দেওয়া হয়। জেলা থেকে সচিবালয়ে পোস্টিং হলে সে সুবিধা আর থাকে না।

সূত্র: কালের কন্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.017690181732178