গ্রামাঞ্চলে সালিসে বিচারের নামে মানুষকে অপমান-অপদস্থ করার ঘটনা ঘটেই চলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই ফল মারাত্মক। প্রায়ই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এমন সালিস বসান। গত রবিবার কিশোরগঞ্জের রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকচুরি গ্রামে সালিস বসিয়ে এক কলেজছাত্রীকে অপমান-অপদস্থ করা হয়। মেয়েটি অপমান সইতে না পেরে ওই দিন রাতে আত্মহত্যা করে।
মেয়েটির নাম মোমেনা আক্তার। বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। কিশোরগঞ্জের রশিদাবাদ ইউনিয়নের মাকরাউন্দ গ্রামের উজ্জ্বল মিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রবিবার সকালে তাকে মুঠোফোনে ডেকে নেয় উজ্জ্বল। বোনের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে সে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের জামতলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে উজ্জ্বলের সঙ্গে দেখা করে।
সন্ধ্যায় তাদের ঘোরাঘুরি দেখে বাসস্ট্যান্ডের লোকজনের সন্দেহ হলে তারা তাদের আটক করে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। উজ্জ্বল সম্পর্কের বিষয়টি চেপে যায় এবং বলে, মেয়েটি তার আপন ভাবি। মোমেনা সত্য কথাই বলে। সে বলে, তারা পরস্পরকে ভালোবাসে, বিয়ে করতেই ঘর থেকে বের হয়েছে দুজন। এরপর উভয়ের এলাকার জনপ্রতিনিধিদের খবর পাঠানো হয়। উজ্জ্বলের এলাকার ইউপি সদস্য সালিসের আয়োজন করেন। দূরত্বের কারণে মোমেনার এলাকার লোকজন সেখানে সময়মতো হাজির হতে পারেনি। সালিসে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সালিসকারীদের কেউ কেউ ছেলেটিকে পালাতে সাহায্য করেন। পরদিন আবার সালিস হবে বলে জানানো হয়। মোমেনাকে এক আত্মীয়ের জিম্মায় দেওয়া হয়। রাতে তার ওপর পুরো দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়। বলা হয়, পরদিন তাকে দোষী বানিয়ে বিচার করা হবে।
লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও ভালোবাসার মানুষের প্রতারণা-প্রবঞ্চনা মেনে নিতে না পেরে গভীর রাতে সে গাছে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। সালিসের আয়োজক রশিদাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহফুজুর রহমান মাহফুজ ঘটনার কোনো দায় নিতে চাচ্ছেন না। উজ্জ্বলের মা বলেছেন, ছেলের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। এখন জেনে খারাপ লাগছে। মেম্বার সালিসের আগে ঘটনাটি জানালে মোমেনাকে তিনি ঘরে তুলে নিতেন। এ ব্যাপারে মেম্বারের অবহেলা রয়েছে।
সালিসে অপমান-অপদস্থ করার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। দরিদ্র সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারীরা এসবের শিকার হচ্ছে। সালিস-বিচারের নামে নিপীড়নের ঘটনা বা অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটেনি। গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে প্রতিবেদনের অভাব নেই। তার পরও সংশ্লিষ্টদের নজর এদিকে খুব একটা পড়ছে না। আইন ও বিচার বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যরা এ বিষয়ে যথাযথ নজর না দিলে মোমেনাদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতেই থাকবে। প্রতারণা করার দায়ে প্রেমিকেরও শাস্তি হওয়া উচিত।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ