অভিযুক্ত রকেটকেই উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব: মহাপরিচালকের শেষ কর্মদিবসের অপকর্ম!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিদায়ী মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের শেষ কর্মদিবসে সর্ব বৃহৎ অপকর্মটিই করলেন! উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়মে অভিযুক্ত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেটকেই ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা বিতরণের দায়িত্ব দেয়ার পক্ষে ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন বিদায়ী মহাপরিচালক। ৪ঠা জানুয়ারি শেষ কর্মদিবসে রকেটের পক্ষে ফাইল অনুমোদন দেন তিনি। তার সঙ্গে রয়েছেন প্রকল্প পরিচালক শরীফ মামুন। উপেক্ষা করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ  নেয়ার অনুরোধ। অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা থেকে মহাপরিচালককে এই মর্মে অনুরোধ জানানো হয় যে, রকেটকে উপবৃত্তি বিতরণের কাজটি দিলে পিপিআরের ব্যত্য় হয় কি-না সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেয়ার। কিন্ত শেষ বিকেলে ফাইলে অনুমোদন করেছেন বিদায়ী মহাপরিচালক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন একইভাবে অটিজম প্রকল্পের কাজ একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছিল। পরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় সেটি বাতিল হয়। রকেটের ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে।

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ বিতরণে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা তিন প্রতিষ্ঠান এজন্য আবেদন করলেও বিকাশ ও রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশকে বিবেচনায় নিচ্ছে না অধিদপ্তর ও প্রকল্প। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের (ডিবিবিএল) রকেটের মাধ্যমেই মাধ্যমিকের উপবৃত্তির টাকা প্রদান সহজ হবে বলে মত দিয়েছেন মহাপরিচালক। সঙ্গে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাধ্যমিকের উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের দায়িত্ব পেতে আবেদন করে ডিবিবিএলের রকেট, রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ ও বিকাশ।  বিকাশ কোনো সার্ভিস চার্জ ছাড়াই সেবাটি দেবে বলে আবেদনে উল্লেখ করে। আর শিওর ক্যাশ শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দাবি করে। ডিবিবিএল ও শিওর ক্যাশ এজেন্ট চার্জ হিসেবে চায় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। তবে বিকাশ এজেন্ট চার্জ ছাড়াই সেবাটি দিতে আগ্রহী।

মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণে ২০১৫ সালের জুনে অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। তবে নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম না থাকায় বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এ সেবা দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। ২০১৪-এর জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত এ কার্যক্রম পরিচালনা করে ডিবিবিএল। এক্ষেত্রে ডিবিবিএলের সেবার জন্য চার্জ ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক এর অতিরিক্ত চার্জ নেয়। ফলে সেবাটির জন্য বাড়তি সার্ভিস চার্জ দিতে হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপবৃত্তির অর্থ অভিভাবকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জের পরিমাণ বেশি। সরকারের অর্থে এসব প্রকল্প পরিচালিত হয় বলে সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা না থাকায় অন্য একটি ব্যাংকের মাধ্যমে সেবাটি দিতে গিয়ে অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ গুনতে হচ্ছে।

এজন্য সার্ভিস চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করে প্রকল্প কার্যালয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু করা নীতিমালায় ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবা কার্যক্রমের চার্জ নির্ধারিত রয়েছে। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি চার্জমুক্ত করার সুযোগ নেই। তবে সরাসরি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবাদাতা ব্যাংক বা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হলে সার্ভিস চার্জ কমে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালিত আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া অনলাইন ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং নেই, এমন এলাকায় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হ্রাসের জন্য প্রতিযোগিতামূলক ফি নির্ধারণে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা যেতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042622089385986