আজ সবাইকে ফ্রি দিলাম, মিলিয়ে নিও

বিভাষ বাড়ৈ |

‘প্রতিদিনের মতো আজকের সকাল বেলা প্রশ্ন সবাইকে ফ্রি দিলাম, শুধু প্রমাণ দেয়ার জন্য। পরীক্ষার হল থেকে এসে মিলিয়ে নিও আর যারা আগের দিন ১০,০০০ টাকা দিতে পেরেছ তাদের একদিন আগে এই প্রশ্নটা দিয়েছিলাম। ‘অনেকেই বিশ্বাস করতে পারো নাই তাদের কাছে প্রমাণ দেয়ার জন্য দিলাম।’

রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে এভাবেই এইচএসসি পরীক্ষার একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস করে যাচ্ছিল একটি বিশেষ গোষ্ঠী। শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৫ মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে মূল প্রশ্নের ছবি তুলে হুবহু প্রশ্ন ছেড়ে দেয়া হচ্ছিল, যেখানে ঘোষণা দিয়েই পর পর একই কাজ নির্বিঘেœ করে যাচ্ছিল আহমেদ নিলয় নামের একজন। সরকারের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা কর্মকর্তা এমনকি বিটিআরসি কেউ-ই অপরাধীর নাগাল পাচ্ছিল না। বহু চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত গত কয়েকদিন আগে অপরাধী নিলয়কে আটক করার খবর দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েক মাসে পাবলিক পরীক্ষা, নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আটক করা হয়েছে অর্ধ শতাধিক অপরাধীকে। আটকের পর প্রশ্ন ফাঁসের অভিনব সব কৌশল নিয়ে অপরাধীদের দেয়া তথ্য রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার দশা। অপরাধীরাই বলছে, ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপে পাঠিয়ে দেয়া হতো প্রশ্নপত্রের লিংক। ‘এমএলএম পদ্ধতি’তে চালানো হচ্ছে প্রতারণা

এটিএম কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডকে বানানো হয়েছে প্রশ্ন ফাঁসের অস্ত্র! এদিকে একের পর এক অপরাধী ধরা পড়ছে তবু বন্ধ হচ্ছে না প্রশ্ন ফাঁস। পরীক্ষা হলেই প্রশ্ন ফাঁস যেন একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁস না হলেও ভুয়া প্রশ্নের বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে, সকল নিয়োগ পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা কোনটিই এখন সঙ্কটমুক্ত নয়। পরীক্ষা হলেই প্রশ্ন ফাঁস, না হয় প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে দেশজুড়ে প্রতারণা। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতাও। একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়ত ফাঁসের গুজব শিক্ষার্থী, চাকরি প্রার্থীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর কম শোনা গেলেও এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, নার্স নিয়োগের একটি পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বাতিলের পর নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, লাগাতার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ম্লান হতে বসেছে সরকারের শিক্ষার সকল অর্জন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁসের খবরে সত্যতা না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। একের পর এক অভিযোগে মানুষ আস্থা হারিয়েছে পরীক্ষার প্রতি। এখন এই আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াতে প্রশ্ন ফাঁস ও প্রতারণার অন্যতম কারণ অভিহিত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অব্যাহত ঘটনা জাতিকে মেরুদ-হীন করে দেবে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন ফাঁস না হলেও পরীক্ষায় মানুষের আস্থা নেই। তাই পরীক্ষার বিষয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

এবার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার পর থেকেই কিছু শিক্ষার্থী প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে তাদের অবস্থানে যোগ দিয়েছেন অনেক পরিচিতজনও। যদিও প্রশ্ন ফাঁসের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই। তবুও চলছে বিতর্ক। এরই মধ্যে সম্প্রতি ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল তুঘলকী কা-। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি করে ফল প্রকাশের অভিযোগও উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করলেও গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ১৫ জন।

এর আগে মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অপরাধীসহ গত এক বছরে নয়টি মামলায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অন্যদের তুলনায় ভাল ফল দেখাতে স্কুল, কলেজ থেকেই প্রশ্ন ফাঁস!

স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ভাল করানোর জন্য স্কুল ও কলেজ শিক্ষকরাই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। রেজাল্ট নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ও সুনাম অর্জন করতে এই অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন কিছু শিক্ষক ও গবর্নিং বডির চেয়ারম্যান ও সদস্য। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রকে গ্রেফতারের পর তদন্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ইতোমধ্যেই আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজীর শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। স্বীকারোক্তিতে তিনি জানিয়েছেন, স্কুলে প্রশ্ন পৌঁছে যাওয়ার পর ওই স্কুলের অধ্যক্ষ আব্দুল আলিমের নির্দেশে তিনি সেগুলোর ছবি মোবাইল ফোনে তুলতেন, তারপর উত্তরসহ শিক্ষার্থীদের দিতেন। শিক্ষার্থীরা যেন ভাল রেজাল্ট করে এবং স্কুলের সুনামও বৃদ্ধি পায় সেজন্য এই পন্থা বেছে নেন বলেও স্বীকারোক্তিতে জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার আব্দুল বাতেন বলছিলেন, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জ্ঞানকোষ নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ওই কোচিং সেন্টারে পড়তে আসা অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও প্রশ্ন দিতেন। তাদের সঙ্গে ৫-৭ হাজার টাকায় চুক্তি করতেন।

জানা গেছে, রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নেয়ার পথে বা প্রশ্ন ভাগ করার সময় ছবি তুলে তা সংগ্রহ করে। তারপর ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নের সমাধান বা উত্তর বানিয়ে ফাঁসের ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর তা আদান-প্রদানের জন্য এই চক্রটি মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে থাকে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, কোচিং সেন্টারের প্রসার, শিক্ষার্থীদের ভাল ফলে সুনাম বৃদ্ধি এবং মুনাফা লাভের জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল জ্ঞানকোষ কোচিং সেন্টার। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, স্কুলের ভাল ফলের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করতে শিক্ষকরাই প্রশ্ন ফঁাঁসের সঙ্গে জড়িয়েছেন। তাদের কারণেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাত্রছাত্রীদের হাতে আগেই চলে যায়। তাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর আরও অন্তত ১১টি স্কুল ও কলেজ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, অপকর্মে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছেন খোদ অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, গবর্নিং বডির সদস্যরাই। পরীক্ষার শুরুর দুই-তিন ঘণ্টা আগেই বান্ডিল খুলে প্রশ্নের উত্তর ঠিক করে শিক্ষকরাই পৌঁছে দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীদের কাছে! এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় রাজধানীতে এমন ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেছেন রাজধানীর ডেমরার গোলাম মোস্তফা মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

টানা তিন বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষায় একই অপকর্ম করে প্রতিষ্ঠানের পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তি প্রায় শতভাগ নিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত প্রমাণসহ ধরা খেল গবনিং বডির সভাপতি, সদস্য, অধ্যক্ষসহ পুরো চক্র। নির্দিষ্ট সময়ের তিন ঘণ্টা আগেই এখানে পরীক্ষা নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরীক্ষার দিন ভল্ট থেকে প্রশ্ন বের করে সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত পরীক্ষার্থীদের হলরুমে একত্র করে প্রশ্নের সমাধান করা হয়েছে। প্রমাণ মিলেছে নির্ধারিত সময়ের আগে পরীক্ষা নিয়ে ৬০ জনের মধ্যে ৫৯ জন, অর্থাৎ ৯৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই এখন পরিষ্কারÑ পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা বা ৩০ মিনিট আগে প্রশ্ন ফাঁস করা হয় কেন্দ্র নয়ত জেলা বা অন্য কোন ট্রেজারি থেকে। কারণ বোর্ডের যে প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া যায় সে প্রশ্ন বিজি প্রেস থেকে প্রস্তুত হয়ে বিভিন্ন ট্রেজারিতে যায়। ছাপার আগে বোর্ডের কাছে থাকে হাতে লেখা প্রশ্ন। প্রতিবারই ছাপা হওয়া প্রশ্ন ফাঁস হতে দেখা যাচ্ছে। ফাঁস করে দেয়া হয়েছে ফেসবুক, ভাইবারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নের বান্ডিল খোলার পরই একটি চক্র মোবাইলে সেই প্রশ্নের ছবি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাকার লেনদেনেরও প্রমাণ মিলছে না বরং ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে একটি চক্র সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চায় বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। ফেসবুকে প্রশ্ন ছেড়ে দেয়ার ঘটনাকে কোন কেন্দ্রের ইচ্ছাকৃত অপকর্ম অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন, যেহেতু আগের দিন ফাঁস হচ্ছে না, হচ্ছে পরীক্ষার দিন। তাও এক ঘণ্টা আগে। এতে পরিষ্কার যে কেন্দ্রে প্রশ্ন গেলে এরপর তা ফাঁস করা হচ্ছে। ফেসবুকে দিয়ে দিলে টাকা পাওয়া যাবে না। তার পরেও সেভাবে দেয়া হচ্ছে। এর কারণ হলো, সরকারকে হেয় করা। না হয় প্রশ্ন বিক্রি করে টাকা আদায় করা হতো, প্রশ্ন এভাবে ফেসবুকে দেয়া হত না। কেন্দ্র এ অপকর্মে আছে। তবে টাকা আদায় করার উদ্দেশ্য যেখানে আছে সেখানে প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া যায় না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম বলছিলেন, শিক্ষক বা গবর্নিং বডির মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক বা অন্য শিক্ষকরা যদি আগেই প্রশ্নপত্রের বান্ডিল খুলে তাদের পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের চিন্তাধারা কত নিচে নেমে গেছে। তবে আশার কথা শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা এসব অপরাধের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। শক্ত অবস্থান নেয়ার কারণেই কিন্তু গত কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা দেখা যায়নি। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতেই শিক্ষামন্ত্রী ফলের ভিত্তিতে সেরা ১০ বা ২০ কলেজ নির্বাচন করা বন্ধ করেছেন। এর সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।

নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ভয়াবহসব কৌশল!

নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস চক্রের বড় একটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে সরকার। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশন নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে অপরাধী চক্রের হ্তোাদের পরিচয়। এরাই মোবাইলের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বের করে দ্রুত সমাধান শেষে হলে উত্তরপত্রও সরবরাহ করছে। উত্তর পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এটিএম কার্ডসদৃশ মাস্টার কার্ড ও বিশেষ ধরনের ক্ষুদ্র ব্লুটুথ হিয়ারিং ডিভাইস ব্যবহার করছে।

একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস করে এরা একদিকে কোটি টাকা লোপাট করছে অন্যদিকে সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। জানা গেছে, সম্প্রতি সারাদেশে একটি অধিদফতরের নিয়োগ পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করার পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে অপরাধীদের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে তদন্তে নেমে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ভয়াবহ চিত্রের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একাধিক জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অপরাধীরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করাসহ প্রক্সি পরীক্ষার্থী, বিশেষ মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ও উত্তরপত্র পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিবেদনে পাবলিক ও নিয়োগ পরীক্ষায় অপরাধীদের তৎপরতার কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, অপরাধীরা পরীক্ষা শুরুর আগে কখনও কখনও শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যে মোবাইলের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বের করে দ্রুত সমাধান শেষ হলে নির্দিষ্ট প্রার্থীর কাছে উত্তরপত্রও সরবরাহ করছে। উত্তর পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এটিএম কার্ডসদৃশ মাস্টার কার্ড ও বিশেষ ধরনের ক্ষুদ্র ব্লুটুথ হিয়ারিং ডিভাইস ব্যবহার করছে। বিশেষ ধরনের মাস্টার্স কার্ডকে কাঁধ অথবা কানের কাছাকাছি শরীরের কোন স্থানে টেপ দিয়ে আটকানো হয় এবং বিশেষ হিয়ারিং ডিভাইস কানের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

মাস্টার কার্ডের নম্বরে কল মোবাইলে দিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসিভ হয়ে যায়। এরপর জালিয়াত চক্রের সদস্যরা প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়। এই কাজের জন্য বিশেষভাবে তৈরি টি-শার্ট পাওয়া যায় যা মোবাইলের কাজ করে। এসব টি-শার্ট ও মোবাইল ডিভাইস জালিয়াত চক্র চীন থেকে আমদানি করে বলেও বেরিয়ে এসেছে তদন্তে। সরকারকে সতর্ক করে বিশেষ সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফাঁস চক্রের একাধিক সদস্য বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হলেও অর্থের বিনিময়ে আবার কখনও আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে একই কাজে লিপ্ত হয়েছে।

জালিয়াতির মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যেমন নিয়োগ পাচ্ছে তেমনি নিয়োগের আগে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রয়োজন না হওয়ায় জামায়াত-শিবিরের কর্মী সমর্থকরা সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়ছে।

এমএলএম পদ্ধতিতে প্রতারণা!

এখন পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি পরীক্ষায় আটক অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রতারকরা শর্ত দেয়, কেউ যদি প্রশ্ন কেনার জন্য আরও পাঁচ জনকে এনে দিতে পারে তাহলে তাকে টাকা ছাড়াই প্রশ্ন দেয়া হবে। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, অপরাধীরা এমএলএম পদ্ধতিতে প্রতারণাও করছে। কারণ অপরাধীরা অফার দিচ্ছে কেউ যদি প্রশ্ন কেনার জন্য আরও পাঁচ জনকে এনে দিতে পারে তাহলে তাকে টাকা ছাড়াই প্রশ্ন দেয়া হবে। এটা হচ্ছে ডেসটিনি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতারণামূলক অফার।

এটিএম কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডও প্রশ্ন ফাঁসের অস্ত্র!

কেবল এমএলএম পদ্ধতিতেই জালিয়াতি নয়। এটিএম কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডকেও বানানো হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসের অস্ত্র! দেখে মনে হবে ক্রেডিট কার্ড। মানিব্যাগে ভরে পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়লে হয়ত সন্দেহই করবে না কেউ। কিন্তু এর সঙ্গে যখন যুক্ত হবে ইয়ারপিস, ওই কার্ডই তখন কানে কানে বলে দেবে প্রশ্নের উত্তর। এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ইদানীং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসছেন প্রতারক শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ওই যন্ত্রসহ আটকের ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরও একই ঘটনা ঘটেছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা এক শিক্ষক বলছিলেন, পরীক্ষার এক ঘণ্টার মাথায় সন্দেহ হয়। এক পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করে পাওয়া যায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ওই যন্ত্রের সাহায্যে উত্তর জেনে নিয়ে সে পরীক্ষার হলে উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাটের চেষ্টা করছিল। ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো দেখতে ওই যন্ত্রের সঙ্গে এই জালিয়াতিতে ব্যবহার করা হয় তারবিহীন ‘ব্লুটুথ’ ইয়ারপিস। আকারে ছোট হওয়ায় পরীক্ষার্থী অন্য কারও দৃষ্টি আকর্ষণ না করে সহজেই তা কানের সঙ্গে আটকে রাখতে পারেন।

শাস্তিহীনতাই প্রশ্ন ফাঁসের বড় কারণ

প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকলে শাস্তি ন্যূনতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-সহ অর্থদ-। পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে এই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আইন প্রণয়নের পর পাবলিক, মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় শতাধিকবার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও এক মাস শাস্তিরও নজির নেই কোন অপরাধীর। কেলেঙ্কারির পর পরীক্ষা স্থগিত করে অন্তত ৪০ বার তদন্ত কমিটি গঠন করে সঙ্কট সমাধানের সুপারিশ করা হলেও আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি একটি সুপারিশও। ফলে একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাগাতার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ম্লান হতে বসেছে সরকারের অনেক অর্জন।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শ

সরকারের সাফল্যকে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ‘প্রশ্ন ফাঁস’ শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যত অন্ধকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, যে কোন পরীক্ষাতেই প্রশ্ন ফাঁস কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আজ যেসব শিক্ষার্থী ভাল রেজাল্ট করল তাদেরও মন ভার কেন? কারণ অনেকেই তাদের টিপ্পনী কেটে বলবে, তোমরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফল করেছ! কিন্তু আসলে সব শিক্ষার্থী তো ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়নি তাহলে তাদের কেন এমন কথা শুনতে হবে? তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে, যা একটা জাতিকে মেরুদ-হীন করে দেবে।

দেখা যাচ্ছে এখন পরীক্ষা হলেই চলে একই কর্মকা-। অনেকে হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, ভবিষ্যতে মনে হয় পরীক্ষাই নেয়া যাবে না। কিন্তু এই অবস্থার সমাধানের পথ কী? জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ একরামূল কবীর বলছিলেন, আসলে শিশুদের পরীক্ষা নিয়েও এখন একটি মহল ভুয়া প্রশ্ন ছেড়ে দিয়ে বাণিজ্য করে। তার পরেও বিভিন্ন সময় কিছু পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় মানুষ আস্থা হারিয়েছে।

তিনি বলেন, এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে আস্থা হারিয়েছে বলে সকল পরীক্ষা নিয়েই গুজবে কান দেয়া ঠিক নয়। আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুরো প্রক্রিয়াকে মানুষের কাছে আরও স্বচ্ছ করতে হবে। একটি জাতীয় কমিটি করা যেতে পারে। যে কমিটি করলে মানুষ আরও আস্থা পরে। তবে এই কমিটি কোন প্রশ্ন দেখতে পারবে না। তারা পরীক্ষা মনিটরিং করবে।

পরীক্ষার হলে প্রবেশে কড়াকড়ি

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সম্প্রতি পাবলিক পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আগামী ১ নবেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা থেকেই এ নিয়ম কার্যকর হবে। সকল শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে প্রবেশের পরই প্রশ্নপত্র খোলা হবে। এছাড়া পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা কোন ব্যক্তি কোন মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখতে পারবেন না। কেবল কেন্দ্র সচিব যোগাযোগের জন্য একটি সাধারণ ফোন রাখতে পারবেন।

জাতীয় মনিটরিং ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সুপারিশ অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কি সুফল পাওয়া যাবে? গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলছিলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গত এক বছরে নয়টি মামলায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে এইচএসসিতে ১৮ জন, এসএসসিতে ৩৫ জন এবং অন্যরা মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষার সময় গ্রেফতার হয়। এসব মামলার কোনটারই অভিযোগপত্র হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই চার্জশীট দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিবরা ক্যামেরাবিহীন মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়টি যথাযথভাবে মানছেন না অভিযোগ করে তিনি বলেন, এটা যাতে কড়াকড়িভাবে মানা হয় তা দেখতে হবে।

তিনি আরো জানান, এবারের মেডিক্যালের প্রশ্ন কিনতে আসা কয়েকজন পরীক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পরীক্ষার্থী ও তাদের মায়েদের ছেড়ে দিলেও বাবাদের নামে মামলা করা হয়। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেছুর রহমান বলেন, পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্র সচিব ছাড়া কারো কাছেই মোবাইল থাকবে না- এটা নিশ্চিত করতে পারলেই প্রশ্ন ফাঁস হবে না। কারণ ফোনে ছবি তুলে তারা বাইরে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেন। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলে তার এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন বাইরে চলে আসে জানিয়ে মোখলেছুর রহমান পরীক্ষার্থীদের আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকিয়ে তারপর প্রশ্নের প্যাকেট খোলার পরামর্শ দেন।

র‌্যাবের কর্মকর্তা মেজর রাহাত মনে করেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে হাতে হাতে প্রশ্ন দেখা যায়। বৃষ্টি না হলেও হাতে হাতে ছাতা নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক প্রশ্নের সমাধান দেখেন। সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নইলে এত জায়গা, এত মানুষ তাই সম্ভব হবে না। পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করে তিনি বলেন, ওরা হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসের ওয়ান অব দ্য মিডিয়া।জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের যুগ্ম-পরিচালক শিরিন আক্তার পরীক্ষা কে›েন্দ্র আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো ছাড়াও ফেসবুকে প্রশ্ন ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিলেন।

সৌজন্যে: জনকণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002795934677124