বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি আইনের আওতায় থাকতে পারে, তাহলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো কেন আইনের আওতায় আসতে পারবে না। তাই দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় ও বিধিবদ্ধ কাঠামোতে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ এর মেজবান হলে মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্টের দিনব্যাপী এইচআর সামিটে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো আইনি কাঠামোর মধ্যে নেই। সেগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা দরকার। যেকোন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেটা ইংলিশ মিডিয়াম হোক বাংলা বা কওমি মাদ্রাসা হোক তাকে রেজিস্ট্রেশন করে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। বিধিবদ্ধতার মধ্যে থাকতে হবে। কেননা মানসম্মত শিক্ষক ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা হয় না।
দেশে কোন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু আছে আমরা তা জানতে পারছি না। তারা কি পড়ায়, কি করে, কোত্থেকে তাদের অর্থসংস্থান হয়, কারা তাদের পরিচালনা করে কিছুই জানছি না। এভাবে চলতে পারে না। এটা পৃথিবীর কোন দেশে নেই।
তিনি বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে সব প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করা যাবে না। আমি একজন নাগরিক ও শিক্ষা অধিকার আন্দোলনের কর্মী হিসেবে বলবো দেশের মানুষের সেবায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে সুযোগ করে দিতে হবে। কাউকে ছোট করা বা কোনভাবে ব্যত্যয় ঘটানো ঠিক না। মাদ্রাসা খুলবেন ভাল কথা, তবে তা পরিচালনা করতে জানতে হবে। যেমন খুশি তেমন চলতে পারে না। এজন্য শিক্ষা অধিকার আইন করছে সরকার। খসড়া হচ্ছে। সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইনের আওতায় আসুক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি আইনের আওতায় থাকতে পারে, তাহলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো কেন আইনের আওতায় আসতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, সবার তো সামর্থ্য নেই। দেশে একদিকে সম্পদের পাহাড় হচ্ছে অন্যদিকে বৈষম্য হচ্ছে। একদিকে তথ্যপ্রযুক্তি অনন্য উচ্চতায় যাচ্ছে অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তিকে ভুল পথে ধাবিত করা হচ্ছে। যেকোন মানুষের কাছে দক্ষতা থাকে, কিন্তু দক্ষতার জন্য মূল্যবোধ অপরিহার্য। যারা হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে কাজ করেন তারা মানুষকে সম্মান দেওয়ার ধরন সম্পর্কে জানেন। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা কেন্দ্রীক হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ৪টি পরীক্ষা দিতে হয়। শিক্ষার্থীরা বর্তমানে কোচিং গাইড-নির্ভর হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের জীবনে এখন খেলা আর আনন্দ নেই।
দেশে লিডারশিপ তৈরি করতে হবে। এ লিডারশিপ তৈরিতে হিউম্যান রিসোর্স যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সকলকে কাজ করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসএইচআরএম দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন কাশেম খান, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. এম সেকান্দর খান, আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম এর উপাচার্য ড. এ কে এম আজহারুল ইসলাম।
দিনব্যাপী সামিটে কি-সোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্টের প্রেসিডেন্ট মো. মোশাররফ হোসাইন। বিশেষ স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেন লিড কনসালটেন্টের প্রধান নির্বাহী এম জুলফিকার হোসাইন।
এইচআর ভ্যালু প্রোপোজিশন ফর বিজনেস-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এইচআর সামিটে প্রায় ৩০০ এইচআর প্রফেশনালরা উপস্থিত ছিলেন।