ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পুনঃভর্তি ফি, সেশন ফি, একাডেমিক ফি বা অন্য কোনো নামে ফি আদায় করা যাবে না বলে গত ২৫ মে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট। কিন্তু স্কুলগুলো এ নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না। বরং প্রতিষ্ঠানগুলো হরেক নামে ফি আদায়ের মহোৎসব চালিয়েই যাচ্ছে। আদালতের রায়ে বলা হয়, শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বার্ষিক পুনঃভর্তি ফি বা সেশন ফি নেওয়া বেআইনি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে নিচ্ছে পুনঃভর্তি বা সেশন ফি। আবার কোনো কোনো স্কুল এই পুনঃভর্তি ফি-ই নিচ্ছে অন্য নামে।
অনুসন্ধানে ধারণা পাওয়া গেছে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে যেন দেখার কেউ নেই। এসব স্কুল তদারকির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নীতিমালাও নেই। তাই ইচ্ছামতো নিজের খেয়ালখুশি মতো চলছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন দেওয়া হচ্ছে, অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলাকাটা ফি। আবার মাঝে-মধ্যেই বাড়ানো হচ্ছে ভর্তি ফি, মাসিক বেতনসহ নানান চার্জ। সব মিলে লাগামহীন ঘোড়ার মতোই দাপিয়ে চলছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, রাজধানীর ওয়ারীতে ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে পুনঃভর্তি ফির নাম পাল্টে নেওয়া হচ্ছে ‘অন্যান্য ফি’ নামে। জুন-জুলাই শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্কুলটি এই অন্যান্য ফি নামক ভুতুড়ে খাতে হাতিয়ে নিচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। স্কুলটির বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা প্রশাসনের এমন অনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষাসচিব ও স্কুলটির প্রিন্সিপাল বরাবর লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছেন। আবেদনে অভিভাবকরা উল্লেখ করেছেন, স্কুলটিতে ফরমের মাধ্যমে ‘বিবিধ ফি’র নামে ১৫ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ আগের ফরমে ‘সেশন ফি’ নামে এ টাকা নেওয়া হতো। সেশন ফির বিকল্প হিসেবেই এ ফি আদায় করা হচ্ছে। আমরা এ অযৌক্তিক বিবিধ ফি বাতিলের আবেদন জানাই। তারা জানান, আজ ওয়ারীর গোপী কিষাণ লেনের এই স্কুলটির সামনে মানববন্ধন করবেন বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এদিকে রাজধানীর বনশ্রীতে অবস্থিত কর্ডোভা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছে এখনো ‘পুনঃভর্তি ফি’ আদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে জানান, নার্সারি থেকে কেজি ওয়ানে পুনঃভর্তির ক্ষেত্রে তার কাছ থেকে রসিদের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। তিনি এর রসিদও প্রতিবেদককে দেখান।
এ অভিভাবকের অভিযোগ, ভ্যাট বাতিলের পর মাসিক বেতনও বাড়িয়েছে এ স্কুল। এ ব্যাপারে স্কুলটির চেয়ারম্যান সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে খুব কম টিউশন ফি নিয়ে থাকি। এ কারণে পুনঃভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে। ’ আদালতের প্রতি তাদের সম্মান রয়েছে উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আরও বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় এ ফি নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। ’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাই কোর্ট পুনঃভর্তি ফি না নেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টিউশন ফি আদায় করছে দিল্লি পাবলিক স্কুল, স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিল্লি পাবলিক স্কুলে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘গ্রেড-৮ শ্রেণিতে তিন মাসের জন্য টিউশন ফি হিসেবে নেওয়া হচ্ছে ৫১ হাজার ৪৯৯ টাকা।
অথচ গত বছর এর পরিমাণ কম ছিল। ’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক জানান, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল পুনঃভর্তি ফি না নিয়ে অন্য নামে অর্থ আদায় করছে। হাই কোর্টের নির্দেশনা অমান্য করাসহ এসব ব্যাপারে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিএম নিজামউদ্দিন বলেন, ‘বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে বার্ষিক ফিসহ নানা ফি নেওয়া হয়। সে হিসাবে ইংলিশ মিডিয়ামে পুনঃভর্তি ফি থাকতেই পারে। এটা না নিলে অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পুনঃভর্তি ফি ছাড়া ইংলিশ মিডিয়ামের অনেক স্কুলে আর কোনো বার্ষিক ফি নেওয়া হয় না। তাই বার্ষিক বিভিন্ন প্রোগ্রামও সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। ’ নিজামউদ্দিন আরও বলেন, ‘আদালতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেলে আমরা একটি রিভিউ পিটিশন করব। ’