রাজধানীতে পরিচালিত দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধে বারবার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আউটার ক্যাম্পাস বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেধে দেয়া সময়সীমা পার হয়ে গেলেও দিব্যি পরিচালিত হচ্ছে সিটি ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) আউটার ক্যাম্পাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী হওয়ায় ওই দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে নীরব ভূমিকা পালন করছে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে আদালতের রায় এবং সরকারের কড়া নির্দেশনায় অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিলেও ওই দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনের তোয়াক্কা না করে আউটার ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে চলতি বছরের ৭ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।
পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনে ইউএসটিসি’র রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের ক্যাম্পাস এবং সিটি ইউনিভার্সিটির পান্থপথের ক্যাম্পাস বন্ধের সুপারিশ করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ২৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আউটার ক্যাম্পাস বন্ধে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হলেও এখনো বন্ধ হয়নি আউটার ক্যাম্পাস দুটি।
অন্যদিকে, গত ২৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-সচিব জিন্নাত রেহানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে একই ইস্যুতে দুই আউটার ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে সাবেক এক সংসদ সদস্যের প্রভাবে এখনো আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে সিটি ইউনিভার্সিটি। গত চার বছর ধরে রাজধানীর পন্থপথে সিটি ইউনিভার্সিটির আউটার ক্যাম্পাসে ভর্তিসহ সব কার্যক্রম চলছে। পান্থপথের এ ক্যাম্পাসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
এ বিষয়ে সির্টি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এন আর এম রোবহান উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আউটার ক্যাম্পাস চলবে কি-না, তা ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি বলে এখানে কিছু কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমরা সময় বাড়াতে আদালতে রিট করি। আদালত আমাদের তিন মাস সময় বাড়িয়ে দেন। এ সময়ের মধ্যে পান্থপথের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া হবে।
অপরদিকে, চট্টগ্রামের ইউএসটিসি রাজধানীর গ্রিন রোডে চালাচ্ছে আউটার ক্যাম্পাস। দীর্ঘদিন ধরে এখানে চলছে ভর্তি, পাঠদানসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের এক সদস্য ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতা হওয়ায় আইন অমান্য করে চলছে এ আউটার ক্যাম্পাস।
তবে এটি আউটার ক্যাম্পাস নয় বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রভাত চন্দ্র রায়ের। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর আমরা গ্রিন রোডের আউটার ক্যাম্পাসের সব ভর্তি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে এ ক্যাম্পাসে ১৬ শিক্ষার্থী রয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শেষ হলে ক্যাম্পাসটি বন্ধ করে দেয়া হবে।
আউটার ক্যাম্পাস চালু থাকা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মো. আকতারুজ্জামান (বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, কেউ আউটার ক্যাম্পাস চালাতে পারবে না। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কোনো ছাড় দেবে না।
দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস চলছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, একাধিকবার নোটিশ দিয়ে ইউএসটিসি ও সিটি ইউনিভার্সিটির আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটি আদালত থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারা আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পসে চলে যাবে বলে ইউজিসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইউএসটিসি’র আউটার ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি আউটার ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম চালানো হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।