ঈদে বেতন বঞ্চিত ঢাকার প্রাথমিক শিক্ষক

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দের বারতা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করে থাকেন। এতিমখানা, কারাগার এবং হাসপাতালেও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। পরিবারে শিশু, কিশোর আবাল বৃদ্ধ বনিতা প্রায় সকলের মাঝে নতুন পোশাক পরিধানের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অতি দরিদ্রের মাঝেও ফেতরা বা যাকাতের টাকায় তাদেরও সাধ্যমত উৎসবের আয়োজন করতে দেখা যায়। শ্রমজীবী মানুষও বকশিস বা ঈদ উপহারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তাদের ঈদের উৎসব স্বাচ্ছন্দে উপভোগ করে থাকেন। ঈদের ৩/৪ দিন পূর্ব থেকে সারাদেশে তথা শহরগলো হয়ে ওঠে বকশিসের নগরী।

রমজানে সেহরির সময় গান গাওয়ার দল, মহল্লার দারোয়ান, কাজের লোক, রিক্সা, টেম্পু, স্কুটার বাসে ঈদে বাড়তি টাকা দিয়ে ঈদ হয়ে ওঠে মুসলমানদের মাঝে সার্বজনীন উৎসবে। সরকারি বেসরকারি কর্মচারিরাসহ গার্মেন্টস শ্রমিকরাও ঈদ বোনাসসহ জুন ২০১৭ মাসের বেতনের টাকা প্রাপ্তির মাধ্যমে রমজানের সেহরি, ইফতারিসহ ঈদের বাড়তি খরচের টাকার জোগান দিয়ে আসছেন। এবছর সরকার ২০জুন তারিখের মধ্যে সকল টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সারাদেশের সরকারি কর্মচারিরা তাদের প্রাপ্য পেয়েছেন। সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকেরা যথারীতি জুন ২০১৭ বেতন পেলেও ব্যতিক্রম হলো ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। জুনের ২০ থেকে ২২ তারিখে ঢাকার প্রাথমিক শিক্ষকেরা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় ব্যাংক ও থানা শিক্ষা অফিসে বেতনের আশায়।

অবশেষে বেতন প্রাপ্তি নিরাশ হয়ে অনেককে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। হঠাৎ করে তাদের মাঝে ঈদের আনন্দে অনেকটা ভাটা পড়ে। বেতন পায়নি এ মহা সত্য সংবাদ কাহাকে জানাতে গেলে নিজদের অনেকটা মিথ্যেবাদী বলে মনে হয়। সারাদেশের সরকারি কর্মচারি, প্রাথমিক শিক্ষক সকলের বেতন হিসাব রক্ষণ অফিস নিরীক্ষা করে পাশ করেন। ঢাকা শহরের লক্ষাধিক কর্মচারিসহ প্রায় চার হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন একই প্রক্রিয়ায় পেয়ে থাকেন। শুধুমাত্র শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নিষ্ঠুর কর্মকান্ড কেন? বাঙালি জাতি মাত্র ৯মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছেন। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৯মার্চ ২০১৪ ঘোষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের উন্নীত স্কেলের টাকা পেয়েছেন ২বছর পর।

তিন বছর ধরে ঝুলে আছে সহকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন প্রাপ্তির অসংগতি দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি। তবে কিছুটা ঐতিহাসিক বিজয়ের মতো মনে হলেও সূচনা হয়েছে, যন্ত্রনাময় ঢাকা শহরের চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের পদায়ন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের অন্তরায় হলো ৯ বছর পর ঢাকা শহরে ২/৩ থানা ডিঙিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদায়ন। ২০০-৩০০ টাকা খরচ করে সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে বিদ্যালয় যাওয়ার দূরহ:। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন তলানীতে অবস্থানের আগেই বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশাবাদী।

সারাদেশের সকল সরকারি বেসরকারি কর্মচারি বেতন পেলেও বঞ্চিত হয়েছে ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষককেরা। অথচ ঢাকায় অবস্থান করছেন খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকসহ বড় বড় কর্মকর্তারা। বিষয়টি অনেকটা প্রদীপের নিচে অন্ধকার প্রবাদের মতো। ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষকদের ঈদের আনন্দ ম্লানের পাশাপাশি ব্যতয় ঘটেছে কর্তব্যের অবহেলায় সরকারি নির্দেশ অমান্যের। প্রাথমিক শিক্ষকদের সময়মতো বিদ্যালয় আগমন প্রস্থানের পাশাপাশি কর্তব্য পালনে অবহেলা নি:সন্দেহে গুরুতর অপরাধ। তাদের সকল প্রাপ্তি কেন সময়মতো না পাওয়া অপরাধবোধ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে জাগ্রত হয় না।

বিষয়টিকে নিয়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা নিষ্ঠুরতম কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবেন বলে আশাবাদী।  ঈদের আনন্দের মতো সকলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে এক কাতারে দাড়ানোর আহবান কি অযৌক্তিক? কর্তব্যকাজে অবহেলার দায়ে শিক্ষকসহ সকলের সমভাবে জবাবদিহীতার আওতায় আসুক। এ প্রত্যাশা শিগগির বাস্তবায়ন হোক।

মো. সিদ্দিকুর রহমান: আহবায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027720928192139