প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭ হাজার ১৭৮ অভিভাবককে উপবৃত্তির টাকা তুলতে গিয়ে বাড়তি ২০ টাকা করে দিতে হচ্ছে রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের। কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।
সারাদেশের মতো হোমনায় রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং ‘শিওরক্যাশ’র মাধ্যমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এ উপবৃত্তি প্রদান করছে সরকার। অভিভাবকদের কাছে দ্রুত উপবৃত্তির টাকা পৌঁছানোর এ প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে প্রশংসিত হলেও হোমনা উপজেলায় শিওরক্যাশ এজেন্টদের অতিলোভী মনোভাবের কারণে তৃণমূলে এর প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভুক্তভোগীদের মাঝে।
একাধিক অভিভাবক জানান, শিওরক্যাশের এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা তুলতে গেলে তারা জনপ্রতি ২০ টাকা হারে কেটে রাখছে। অথচ শিওরক্যাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা এজেন্টদের উপবৃত্তির টাকা প্রদানের ওপর প্রাপ্ত কমিশন ইতোমধ্যেই প্রদান করেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৮১টি বিদ্যালয় উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের ২৩ হাজার ৪৪ জন অভিভাবক চলতি বছরে মোট ৫৪ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৫ টাকা উপবৃত্তি পাচ্ছেন।
ইতোপূর্বে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এ টাকা প্রদান করা হলেও বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে এ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। শিওরক্যাশ এজেন্টদের মাধ্যমে এ উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু শিওরক্যাশ এজেন্টদের অনেকে এ সুযোগে অর্থ হাতিয়ে নেয়া শুরু করে।
এজেন্টদের অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, যে পরিমাণ টাকাই হোক না কেন, কমিশনের নামে ২০ টাকা কেটে রাখছে। এভাবে অভিভাবকদের বোকা বানিয়ে প্রতিটি এজেন্ট এক অর্থবছরে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ।
জানা গেছে, উপজেলার বাহের কালমিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা উপবৃত্তির টাকা হোমনা বাজারের নিয়ামত এজেন্ট থেকে উত্তোলন করছেন। কিন্তু এজেন্ট মালিক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০ টাকা করে কেটে রাখছে।
মিরশ্বিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রের অভিভাবক মো. জজ মিয়া জানান, তার সন্তানের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গেলে তার কাছ থেকে ২০ টাকা কেটে রেখে দেয় এজেন্ট।
হোমনা বাজারের শিওরক্যাশের এজেন্ট সুমন জানান, এটা খরচ বাবদ রাখা হয়েছে। এর কোনো নির্ধারিত রেট নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিওরক্যাশ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘এভাবে টাকা নেবার কোন নিয়ম নেই। কারণ প্রত্যেকবার টাকা তোলার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত কমিশন এজেন্টের একাউন্টে জমা হয়। তবে কোন এজেনন্টে বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তার লাইসেন্স বাতিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আল আমিন জানান, উপজেলার ২৩ হাজার ৪৪ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবক উপবৃত্তির সুুবিধা পাচ্ছেন। আর শিওরক্যাশ কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা তালিকা হস্তান্তর করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের তাদের এজেন্টদের তালিকা দেয়নি। তালিকা পেলে আমাদের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে তদারকি করতে পারতেন। এসব অনিয়মও হতো না। তবে এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।