এবার পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে টিআইবি’র ষড়যন্ত্র!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এবার পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে নতুন `ষড়যন্ত্রে’ এনজিও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবী করেছেন,  জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ এবং দলীয় রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রভাব বিদ্যমান। টিআইবি আরো দাবী করেছে, পাঠ্যবই প্রকাশনা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়ম বিদ্যমান। ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধা আদায়, কার্যাদেশ প্রদানে দুর্নীতি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে এনসিটিবিকে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে টিআইবি। তবে, পাঠ্যবই ও পাণ্ডুলিপি নিয়ে  গবেষণা করার মতো  যথাযথ শিক্ষাগত  যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতার  টিআইবির রয়েছে কী-না সেসব প্রশ্নের কোনো জবাব বা ব্যাখা দেয়নি তারা।  কোথায়, কীভাবে পাণ্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা করেছে তা-ও স্বচ্ছ নয়।

টিআইবি আয়োজিত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি): পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও প্রকাশনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক  এক কথিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

টিআইবির কর্মকর্তারা দাবী করেন, পাণ্ডুলিপি প্রণয়নে সক্ষমতা ও পেশাগত দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া পরিদর্শন ও তদারকিতে ঘাটতির ফলে সব ক্ষেত্রে সময়মতো বই সরবরাহ করা হয় না, মানসম্মত বই সরবরাহ করা হয় না।

এনসিটিবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাব বিস্তারের কথা বলা হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এনসিসটিবিকে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

এক প্রশ্নের জবাবে পাণ্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী টিআইবি’র মোর্শেদা আক্তার দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কেউ তথ্য দিতে চাননা।

জানতে  চাইলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, টিআইবি থেকে যিনি পাণ্ডুলিপি নিয়ে কথা বলার জন্য বোর্ডে এসেছিলেন তার শিক্ষাগত  যোগ্যতা  নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই টিআইবি কর্মকর্তার। টিআইবি’র প্রশ্নমালা দেখে মনে হয়েছে প্রকৃত ত্রুটি-বিচ্যুতি অনুসন্ধান করা তাদের উদ্দেশ্য নয়।

কয়েকবছর আগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কতিপয় সংবাদপত্রের দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে টিআইবি।শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির বিরুদ্ধে আনা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পেরে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী টিআইবি কর্মকর্তা চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

এর আগে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নিয়ে কটুক্তি করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ওই বছর ৯ নভেম্বর বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানকে ‘অশিক্ষিত ডক্টরেট’ মন্তব্য করে বলেন, “আইন বুঝবেন না, পার্লামেন্ট বুঝবেন না, না বুইঝা কীভাবে ডক্টরেট হইলেন?

“আপনারা পার্লামেন্টকে পুতুল নাচের রঙ্গমঞ্চ বললেন, অথচ এই পার্লামেন্টে কমিটিতে আপনারা কথা বলে গেছেন। তাহলে পুতুল নাচের রঙ্গমঞ্চে আপনারা বাঁদর নাচ নেচেছেন?”

সম্প্রতি ‘ফরেন ডোনেশন এক্ট’ নিয়ে নিজেদের মত আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে টিআইবিসহ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন। এই কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত।

তিনি বলেন, “টিআইবি কি সমস্ত আইনের ঊর্ধ্বে? সংসদ-সরকার-সংবিধানের উর্ধ্বে?। সংসদ, রাষ্ট্র কী এতই অসহায়। সব দেশেই এরা বিধিবদ্ধ সংস্থা, আইনের অধীন। এক ইঞ্চি বাইরে যাওয়া অধিকার নেই।”
এসময় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে আইন করার জন্য আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

টিআইবিকে সংসদ ‘বরখাস্ত’ করতে পারে জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, “আপনারা আইনের দ্বারা বিধিবদ্ধ সংগঠন। আমার কমিটিতে ফরেন ডোনেশন অ্যাক্ট আছে। ওই আইনে যদি আপনাদের বরখাস্ত করা হয়, তবে আমার কেন, আমাদের নেত্রীও কিছু করার থাকবে না।”

তিন দিনের মধ্যে টিআইবিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানিয়ে তিনি বলেন, “তিন দিনের মধ্যে অবনত মস্তকে ক্ষমা চান। সংবিধান মানেন, পার্লামেন্ট মানে, না হয় ফরেন ডোনেশন অ্যাক্টে…।”

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমাদের স্পিকার সিপিএর চেয়ারপারসন। সাবের হোসন চৌধুরী আইপিইউর প্রেসিডেন্ট। সিপিএর নাম শোনেননি। এ নাম না শুনে ডকটরেট কীভাবে করলেন। রঙ্গমঞ্চ বললেন সংসদকে। আসলে সহেনা যাতনা….. নিশিদিনও বসে আছি শুধু পথপানে চেয়ে।
“বসে থাকেন, নির্বাচন ৫ বছর পর হবে। নানান সুতার টানে আপনারা নাচতে পারেন। আপনাদের এই নাচের উদ্দেশ্য আছে। যখন সামরিক শাসন আসে তখন তো আপনারা কথা বলেন না। এই সরকারের বিদেশিদের কাছে আনুগত্য নেই। আপনাদের আছে।”

জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, “টিআইবিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ প্রশ্ন: বাংলাদেশ সম্পর্কে রেফার করবেন তখন বলবেন, নির্বাচন বানচালের জন্য যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার হতে পারবে কী পারবে না? ১৫ অগাস্টের বিচার করা যাবে কী যাবে না? ২১ অগাস্ট বিচার করা যাবে কী যাবে না? এগুলো করার মাধ্যমে যদি মনে করেন গলা টিপে ধরা হচ্ছে। তাহলে ভুল।”

তিনি বলেন, “জাতির ১২টা যাতে না বাজে সেজন্য পেইনফুল অপারেশন করতে হবে। সেদিকেই আমরা যাচ্ছি। আমি নিশ্চিত যুদ্ধপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে। অসভ্য জানোয়াররা ২-১টি ঘটনা ঘটাতে পারে। টিআইবি সুড রিয়ালাইজ। দিস পার্লামেন্ট বাংলাদেশের ভরকেন্দ্র। যারা সরিয়ে দিতে চায় তারা সংবিধানের প্রতি চ্যালেঞ্জ করছে।”
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ টিআইবির বক্তব্যকে শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে মন্তব্য করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031671524047852