এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সরকারকে একটি মামুলি ধন্যবাদ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

দেশের আপামর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণের পক্ষ হতে কয়েক দিন থেকে সরকারকে একটি ধন্যবাদ দিতে মন চাচ্ছে । আজ সে কাজটি করবার জন্যে এ লেখার অবতারণা । ধন্যবাদ দেবার কারণ-সরকার এবার বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদ বোনাসটি সময়মত বেশ আগে ভাগেই ব্যাংকে পাঠিয়ে দিয়েছে । এবার এ কাজে কেন যে তারা এত সদাশয় হলো-সে কারণটি খুঁজে পাইনে । তদুপরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মামুলি হলে ও একটি ধন্যবাদ না জানিয়ে পারা যায় না ।

বেতন কিংবা উৎসব ভাতা যেটি বলি না কেন- তা পাবার যে তিক্ত অভিজ্ঞতা ও রেওয়াজ তা সত্যি বিচিত্র । সে বিষয়ে পেছন থেকে একটু আলোকপাত করা যাক । তখনো শিক্ষক-কর্মচারীগণের পৃথক  ব্যাংক একাউন্টের সিস্টেম চালু হয়নি । প্রতিষ্ঠানের নামে বেতন-ভাতার একটা আলাদা একাউন্ট ছিল । তিন মাস পর  এক সাথে বেতন আসতো । সেটিও আজকালের ন্যায় শম্ভুক গতিতে । বলা চলে চার-পাঁচ মাস পর একসাথে তিন মাসের বেতন আসতো । সেটিকে বেতন-টেতন না বলে সকলে ‘বেনিফিট’ বলতেন । সে বেনিফিট আসতে আসতে অনকের গোরে ঘাস উঠে যেত । কত ধৈর্য আর কত অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে অবশেষে প্রথম দফা অপেক্ষার পালা শেষ হতো । তারপর দ্বিতীয় দফা অপেক্ষা । দ্বিতীয় দফা আবার কীসের অপেক্ষা ?  শুনুন তাহলে ।

প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে বিল ব্যাংকে যেত।  কোন কোন সময় দেখা যেত সভাপতি স্টেশনে নেই । আবার আজকালের মত উপজেলা সদরে এত ব্যাংকের শাখা ছিল না । বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে জেলা সদরে যেতে হতো । এরপর সুবিধাজনক সময়ে একদিন ব্যাংকে গিয়ে টাকা নিয়ে এলেন প্রতিষ্ঠান প্রধান । দেই-দিচ্ছি করে আরো দু’একদিন তো যেতই । ব্যাংকের লোকজনের মনোভাব এখনকার মত তখন ও মোটেই ভাল ছিল না ।

অনেক আন্দোলনের পর শিক্ষক-কর্মচারীগণ নিজেদের নামে একাউন্ট খোলার অধিকার পেলেন। মাসে মাসে বেতন পাবার সুদিন এলো । সে এক বিরাট অর্জন । কিন্তু, তারপর ও অপেক্ষার প্রহর গুণবার দিন শেষ হয়নি । এক মাসের বেতন আসে আরেক মাস শেষ হবার মাত্র ক’দিন আগে । এ ভাবে চলেছে বহু বছর । এ এক-দু’বছর থেকে বেতন পরের মাসের মোটামুটি দশ তারিখের মধ্যে সরকার দিয়ে দেয় বটে । কিন্তু, আমাদের ব্যাংকের লোকজনের তাতে বড় জোর লাগে । তারা আরো দু’চার দিন যে করে হউক না পেছালে তাদের শান্তি মেলেনা । এদের ভাবসাব যেন এমন-শিক্ষকরা তাদের জন্য বাড়তি ঝামেলা । শিক্ষকদের বেতন পরিশোধে তাদের বড় কষ্ট লাগে ।

ঈদ বোনাসের কথায় আসি। শিক্ষকদের জন্য ২৫% আর কর্মচারীদের জন্য ৫০% বোনাস এই তো মাত্র ক’বছর থেকে চালু হয়েছে । এর আগে কোন বোনাস ছিল না। এ ক্ষেত্রে কর্মচারীগণের জন্য সরকারের অতিরিক্ত ভালবাসায় শিক্ষকগণ মনে কিছু করেননি । কিন্তু, কোন কোন কর্মচারীর বেতন কিংবা বোনাস যখন শিক্ষকের চেয়ে বেশী হয়ে যায়, তখন সঙ্গত কারণে শিক্ষকের মর্যাদার প্রশ্নটি সামনে চলে আসে । উদাহরণ – সহকারি গ্রন্থাগারিক পদটি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর হলে ও বেতন এবং বোনাস উভয়ই সাধারণ শিক্ষকের প্রারম্ভিক বেতন ও বোনাসের চেয়ে বেশী । এভাবে শিক্ষকদের অপমান করার মানে কী ?

বোনাসের ক্ষেত্রে আরেকটা অসঙ্গতি লক্ষণীয় । এ দেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃস্টান সকলেই বাস করে । তাদের প্রত্যেকের ধর্মের মতো উৎসব ও আলাদা আলাদা । কিন্তু, ঈদের সময় অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষক কর্মচারীদের ও বোনাস দিয়ে দেয়া হয়। এ কেমন আচার ? যার যার ধর্মীয় উৎসবের সময় তাদের বোনাসটি যথাসময়ে পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা থাকা উচিত-নয় কি ?

উৎসব ভাতা কিংবা ঈদ বোনাস পাবার ইতিহাসটা একটু বলি। প্রথম প্রথম কয়েক বছর এটি ঈদের পরে আসত । ঈদের সপ্তাহ খানেক পরে ব্যাংকে বিল যেত । পেতে লাগত আরো এক সপ্তাহ । তারপর কয়েক বছর ঈদের ছুটি আরম্ভ হবার এক দু’দিন আগে ব্যাংকে বিল যেত এবং টাকা ঈদের ছুটির পর হাতে আসতো । গত এক দু’ বছর ঈদ ছুঁই ছুঁই করে বোনাস হাতে এসে পৌঁছাতো । এবার গত সপ্তাহে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বোনাসের চেক ছাড় করা হয়েছে। বিল জমা হবে চলতি মাসের ১৮ তারিখ । বোনাসের টাকা শিক্ষক-কর্মচারীগণ হাতে পাবেন ঈদের আগে । উভয় ক্ষেত্রে ব্যাংকের লোকজনের বিশেষ মর্জি প্রযোজ্য হবে ।

এবার এভাবে সময় মত বোনাস দেয়া কোনো শুভ লক্ষণ কি-না কে জানে ? যা-ই হোক না কেন, সংশ্লিষ্টদের মামুলি হলেও একটি ধন্যবাদ জানাই । একটি পুর্ণাঙ্গ ধন্যবাদ সেদিন তাদের প্রাপ্য হবে, যেদিন শিক্ষক-কর্মচারীগণ পুর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস পাবেন । এটি শিক্ষক-কর্মচারীর এক মৌলিক অধিকার । এটি তাদের ন্যায়ত পাওনা ।

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও  দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031049251556396