এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে তৈরি করা উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনণ এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয়ের প্রভাষকদের তালিকায় ভুয়ার আধিক্যের খবর পাওয়া গেছে। নতুন তালিকা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত দিলে ভুয়া বা জালিয়াতরাও এমপিওভুক্ত হবেন। এতে একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় হবে অপরদিকে বৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে এমপিওবিহীন শিক্ষকরা আরও হতাশ হবেন। তাদের এমপিওভুক্তিতে দেরি হতে পারে।
জানা যায়, গত বুধবার ১৩ই ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিমা বিষয়ের মোট ৮১৪ জন প্রভাষকের নাম মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের হাতে এসেছে। আরো কিছু নাম যোগ হতে পারে। এদের মধ্যে অনেকেই ভুয়া বোর্ড পরিদর্শন প্রতিবেদন, জাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে প্রভাষকদের তালিকাভুক্ত হয়েছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগের তালিকার সঙ্গে নতুন তালিকার অমিল অনেক। সারাদেশ থেকে দৈনিকশিক্ষার পাঠক ও সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, ভুয়া ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হঠাৎ প্রভাষকের তালিকায় নাম ওঠানোয় সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলাভিত্তিক এমপিও দালাল ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি জড়িত।
২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বরের পরিপত্র জারি হওয়ার পরে অনুমোদিত বিষয়ের বিপরীতে এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওবিহীন শিক্ষকদের তালিকা সংগ্রহ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। তালিকাভুক্ত প্রভাষকদের এমপিওভুক্ত করতে বার্ষিক ব্যয় কত, কোন খাত থেকে টাকা খরচ করা হবে ইত্যাদি বিষয় জানতে চেয়েছিলো মন্ত্রণালয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন তালিকা হবে এমন খবর পাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুয়া কাগজ তৈরি করে নিয়োগ দেখিয়ে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে তালিকাভুক্ত হয়েছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানান, বুধবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনণের প্রভাষক সংখ্যা ৬১০ জন এবং ফিনান্স, ব্যাংকিং ও বিমার ২০৪ জন।
তিনি বলেন, কতিপয় অসৎ জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে ভুয়ারা।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনার প্রভাষক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে দেয়া তথ্য অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনণ এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয়ের মোট শিক্ষক চারশোর কিছু বেশি হতে পারে।
জানা যায়, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ কয়েকটি জেলায় ভুয়াদের সংখ্যা বেশি রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের অপর এক সহকারী পরিচালক বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে সুষ্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে স্কুল ও কলেজের আইসিটি, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয় ও শ্রেণি শাখার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। অর্থ বরাদ্দ এবং সংস্থানের কথাও উল্লেখ রয়েছে। সব ধরণের শিক্ষকদের তালিকাই অধিদপ্তরের কাছে ছিলো। তারপরও কেন আবার তালিকা? কেন আবার মাঠে তালিকা চাওয়া? কেন আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো? আবার শিক্ষা অধিদপ্তর তালিকা পাঠায় তো মাদ্রাসা অধিদপ্তর পিছিয়ে। সব মিলে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে অযথা কালক্ষেপণ।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনার প্রভাষক সংগঠনের নেতা মাহবুব আলম মাহী দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ‘ভুয়াদের তালিকাভুক্তির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।যারা ভুয়া তাদেরকে চিহ্নিত করা হোক। আর যারা নিয়মানুযায়ী নিয়োগ পেয়ে পাঠদান করিয়ে যাচিছ তাদেরকে অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করা হোক।’