এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়াকে হয়রানি, অনিয়ম ও ঘুষমুক্ত করতে কঠোর হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুঁজে বের করতে মনিটরিং টিম মাঠে নামছে। জড়িতদের তালিকা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া দুর্নীতি ঠেকাতে ওই টিমের সদস্যরা চট্টগ্রাম বিভাগের সবক’টি মাউশি অফিসে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করবেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতাধীন সাত জেলার সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নিয়েও করা হবে টিম।
এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের হয়রানির কথা বিবেচনা করেই মাউশির নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়কে এ প্রক্রিয়া সম্পম্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অনলাইনে সম্পম্ন করারও ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এতসব উদ্যোগের পরও ঘুষ ও হয়রানি ছাড়া এমপিও মিলছে না। এ নিয়ে বিভিম্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ‘ঘুষের হাট মাউশির আঞ্চলিক অফিস’ শিরোনামে গত আগস্টে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ৫ আগস্ট প্রকাশিত হয় ‘চট্টগ্রামে এমপিওভুক্তির হয়রানি পদে পদে’। এমপিওভুক্তিতে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বিভিম্ন মহলে সমালোচনার পরই নড়েচড়ে বসেছে মাউশির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়।
মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-হয়রানি ও টাকা আদায়ের বিষয় নিয়ে চিন্তিত তিনি। সমস্যা সমাধানে সাত জেলার সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নিয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনিয়ম বন্ধ করতে কঠোর অবস্থানে আছি। অনিয়মের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে অনিয়মের নানা বিষয় জানতে পেরেছি। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য পেয়েছি। সমস্যা সমাধানে সভা, সেমিনার করার পাশাপাশি অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনাক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, যত দ্রুত এমপিওভুক্তি হওয়া যাবে, তত দ্রুত মিলবে বাড়তি বেতন। এ অবস্থায় শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে চাইবেন- এটাই স্বাভাবিক। আর যারা অনলাইনে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজটি করেন তারা কারণে-অকারণে বিলম্ব করেন। শিক্ষকরা যাতে অনৈতিক অর্থ লেনদেনে বাধ্য হন সেজন্য তারা নানাভাবে হয়রানিও করেন। এমপিও পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও আবেদনকারীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। এ অবস্থায় আঞ্চলিক অফিসের একটি টিম জেলার প্রতিষ্ঠানপ্রধানসহ সংশ্নিষ্টদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করবে। একই সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম বা ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি করবে। এমপিও প্রক্রিয়া নিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও ফেনী এ সাতটি জেলায় কর্মসূচি পালন করবে মাউশি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়।
সংশ্নিষ্টদের মতে, কিছু শিক্ষকের অজ্ঞতার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। অনলাইনে আবেদনের ফরম পূরণে তারা ভুল করলে আবেদনটি কোনো এক পর্যায়ে আটকে যায়। তা ছাড়া অনেকে আবার নিজেদের আবেদন ফরমের পাসওয়ার্ডও হারিয়ে ফেলেন। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের নিজ নিজ শিক্ষা অফিস সহকারী বা কর্মকর্তা কিংবা প্রোগ্রাম অফিসারের শরণাপম্ন হতে হয়। শিক্ষকদের এমন ব্যর্থতা ও অজ্ঞতাকে পুঁজি করে তখন টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। ফরম আপলোডসহ নানা কাজের অজুহাতে উপজেলা অফিসের অফিস সহকারীরাও মাঝে মধ্যে টাকা আদায় করেন। মাদ্রাসার শিক্ষকরা আইসিটি বিষয়ে বেশি অজ্ঞ বলে তারাই সবচেয়ে বেশি হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন।
জানা যায়, প্রতি জোড় মাসের এক থেকে ১০ তারিখ এমপিওর আবেদন প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে জমা দিতে হয়। পরে ১১ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা হয়। পরে ১৯ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা হতে থাকে। সেখান থেকে আবেদন চলে যায় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের দপ্তরে। সেখানে ২৮ তারিখ থেকে পরের মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদনটি বিবেচনার জন্য জমা হতে থাকে।
সৌজন্যে: সমকাল