এমপিও দুর্নীতিতে জড়িত দেড় শতাধিক কর্মকর্তার তালিকা শিক্ষা অধিদপ্তরে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) কার্যক্রমে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আঞ্চলিক উপ-পরিচালকসহ দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি ও অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। আজ ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শিক্ষকদের একটি তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে কয়েকদিন আগে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তরে আসতে ওই তালিকাটির প্রায় দশ দিন সময় লাগে। ৪৭ পৃষ্ঠার তালিকা সম্বলিত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বরিশাল, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনাসহ কয়েকজন উপ-পরিচালক, জনাবিশেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শতাধিক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারি এবং অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের নাম রয়েছে।

জড়িতরা কোন শিক্ষকের কাছ থেকে কিভাবে কত টাকা নিয়ে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত করেছে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই তালিকাটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হাতে দেন বলে জানা যায়। তালিকা হাতে পেয়ে কারো বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা কারো বিরুদ্ধে ওএসডি ও দূর্গম অঞ্চলে বদলি করার খসড়া তৈরি করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিব ও অধিদপ্তরের একাধিক পরিচালক দৈনিকশিক্ষাডটকমকে এসব খবর নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি ও ভোগান্তি কমাতে অনলাইন পদ্ধতি এবং বিকেন্দ্রীকরণ করা ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে। এরপর ৯টি আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস থেকে এমপিও দেওয়া শুরু হয়। একজন শিক্ষককে এমপিও পেতে কমপক্ষে চার জায়গায় ঘুষ দিতে হয়। স্কুল থেকে ফাইলপত্র তৈরিতে অফিস সহকারীকে (কেরানি) প্রথম ঘুষ দিতে হয়। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হয়। টাকা দিলেই অনলাইন ফাইলে সঠিক মন্তব্য করা হয়, নয়তো নানা কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করা হয়। এরপর ঘুষ দিতে হয় আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে। এভাবে একজন শিক্ষককে এমপিও পেতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। কাগজপত্রে সামান্য সমস্যা থাকলে এই টাকা তিন-চার গুণ বেড়ে যায়।

দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি করছেন। প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যান। এর বিপরীতে নতুন শিক্ষকদের এমপিও দেওয়া হয়। দুই মাস পর পর দেওয়া এমপিওতে সারা দেশে প্রায় দুই হাজার নতুন শিক্ষক-কর্মচারি এমপিওভুক্ত হন। এ ছাড়া প্রতি দুই মাস অন্তর প্রায় এক হাজার শিক্ষক উচ্চতর গ্রেডসহ নানা সুবিধা পান। এসব কাজের কোনোটিই টাকা ছাড়া হয় না।

এমন প্রেক্ষাপটে এমপিওভুক্তি নিয়ে গত দুই বছরে দৈনিকশিক্ষাডটকম পত্রিকায় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ৪৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। ওই প্রতিবেদনটি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অভিযুক্ত কর্মকর্তা -কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আজ ১৫ই ফেব্রুয়ারি মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এমপিও সফটওয়ারটি আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে বলা হয়েছে। ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এমপিওভুক্তির সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি আধুনিক মনিটরিং মেকানিজম তৈরি করতে বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে।

এমপিওভুক্তিতে অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরতে মাঠ পর্যায়ে ২০ টিম গঠন করা হয়েছিল ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ৪০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই টিম দেশের ৬৪টি জেলা সরেজমিন পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক চিত্র প্রতিবেদন আকারে ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেট। ফলে কমিটি হলেও কমিটি কাজ করেনি। অভিযোগ ছিল, ওই সিদ্ধান্ত যাতে বাস্তবায়ন হতে না পারে এ কারণে আঞ্চলিক উপ-পরিচালক ও কয়েকটি ‍উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জোটবেঁধে মাউশির সিন্ডিকেটকে ঘুষ দিয়েছে। ওই ঘুষের অংশ গতমাসে গ্রেপ্তার শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব ও অপর কর্মচারি নাসিরও পেয়েছে বলে জানা যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025689601898193