গতদিন আমাদের প্রিয় দৈনিক শিক্ষাডটকম পত্রিকায় দেখলাম বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারিদের বলা নেই কওয়া নেই, তাদের কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা তহবিলে ৬ শতাংশের পরিবর্তে চলতি জুন মাস থেকে ১০ শতাংশ করে কেটে নেয়া হবে। কী জবরদস্তি! অন্ততঃ বলে- কয়ে, বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিতে হবে না? একেবারে যেদিন গেজেট, তার ও কুড়ি দিন আগে থেকে কার্যকর!
যারা জেনেছেন, সকলেই বিস্মিত হয়েছেন। এ কেমন কায়- কারবার? অনেকে মনে করছেন উল্টো রথে চড়া। তাদের বেতন কেটে কমিয়ে আনার সে এক ষড়যন্ত্র বৈ কিছু নয়। তাদের শত ভাগ স্কেলে বেতন দেয়া অনেকের গা সহে না। সে জ্বালা থেকে বেতন কমিয়ে ৯০ শতাংশ করার সে এক হীন প্রয়াস কি না কে জানে?
অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট নিয়ে শুরু থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা সকলের। শিক্ষক-কর্মচারিদের সর্বশেষ বিড়ম্বনার জায়গা এ দু’টি। এক সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ-পেনশন কিছুই ছিল না। অন্ততঃ শেষ বিড়ম্বনাটা ছিল না। অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হবার পর থেকে শিক্ষক-কর্মচারিদের শেষ জীবন নিয়ে স্বপ্ন যেমন প্রসারিত হয়েছে, তেমনি পরিণত বয়সের বিড়ম্বনা ও হতাশা অনেক বেড়েছে। অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ফান্ডে নিজের দেওয়া চাঁদার টাকা পেতে বছরের পর বছর পরের হাতের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এ দু’জায়গায় এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারি তাদের দাদার বয়েসী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারির কাজটা বিনে পয়সায় করে দিতে চায় না। শিক্ষক-কর্মচারিদের আবেদন জমা দিতে ও বিড়ম্বনা। শুনেছিলাম, অনলাইনে আবেদন করার সিস্টেমের কথা। তাহলে আবার হাতে হাতে জমা রাখা হয় কেন? আবেদন অনলাইনে জমা দেয়া বাধ্যতামুলক হলে যে কেউ ঘরে বসে কিংবা নিজের সুবিধাজনক জায়গা থেকে আবেদন পাঠাতে পারে। না হয় প্রত্যেক জেলায় একটা করে আঞ্চলিক অফিস থাকলে দূর-দূরান্ত থেকে কষ্ট করে ঢাকা যাবার প্রয়োজন পড়ে না। সময়-সুযোগে এক-আধটু খোঁজ-খবর রাখা যায়। কর্তৃপক্ষ এসব সহজ সরল পথ অনুসরণ করলে সুবিধাভোগীরা অন্ততঃ শেষ নিঃশ্বাসটা স্বস্তির সাথে ফেলে যেতে পারতেন।
শিক্ষক-কর্মচারিগণ অবসরে যাবার তিন মাসের মধ্যে কিংবা বড়জোর ছ’ মাসের মধ্যে যদি কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার টাকা হাতে না পান, তাহলে এ টাকা দিয়ে তারা কী করবেন? সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারির ১০ শতাংশ চাঁদায় এক বছরে কত টাকা হয় সে কি কেউ হিসেব করে মোট করেছেন? অন্যদিকে, এক বছরে কতজন শিক্ষক-কর্মচারি অবসর গ্রহণ করেন এবং তাদের সব সুবিধা মিটিয়ে দিতে কত টাকা লাগে? এ হিসেবটা সঠিকভাবে কষলে তিন মাসের মধ্যে অবসরপ্রাপ্তদের সব সুবিধা মিটিয়ে দেয়া কোন কঠিন কাজ হবে না। ইচ্ছে করলে অবসর গ্রহণকারীর শেষ এমপিও কিংবা ঠিক পরের এমপিওতে দিয়ে দেয়া যায়। প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকে একটু ভর্তুকি চেয়ে নেয়া যেতে পারে। তবু, সেটার তেমন একটা প্রয়োজন পড়বে বলে মনে হয় না।
কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে না পারলে সব দুর্নাম সরকারের আর যত দুর্ভোগ শিক্ষক-কর্মচারিগণের হবে। কেবল শিক্ষক-কর্মচারিদের ওপর চাঁদার বোঝা বাড়িয়ে কতটুকু কী হবে সে কেবল ভবিতব্যই জানে। আপাততঃ সেটি সংশ্লিষ্টদের জন্য মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’র সামিল তাতে কোন সন্দেহ নেই।
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।