এমপিও শিক্ষকের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |
দেশে সাড়ে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে পেয়েছে উল্টো দশায়। তাদের প্রাণের দাবি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট। অথচ উল্টো অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টে এখন থেকে মাসে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ চাঁদা গুণতে হবে। এতদিন এ চাঁদার পরিমাণ ছিল ৬ শতাংশ। এখন থেকে সেটি ১০ শতাংশে উন্নীত হলো।
চাইতে চাইতে আরেকটা বছর গত প্রায়। সরকারি চাকুরেরা এই তো আবার ক’দিন পর নতুন হারে দ্বিতীয় ইনক্রিমেন্টটি পাবে। নিজ কর্তব্য কাজে সৃষ্টি হবে নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা। আর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা আবারো নির্মম ভাবে বঞ্চিত হবেন। বঞ্চনাই যাদের নিত্য সাথী। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট না পেয়ে বাড়তি ৪ শতাংশ চাঁদা পরিশোধের তাগিদ। ভাগ্যিস, ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের জায়গায় ৫ শতাংশ না হয়ে বাড়তি ৪ শতাংশ চাঁদা। অন্ততঃ ১ শতাংশ কম আছে। চাইলে এরা সমান করে দিত পারত। বাড়াতেও পারত। একটু দরদ দেখিয়েছে।
শিক্ষকদের কাছ থেকে আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স) নেবার জন্য অনেক জবরদস্তি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের ওপর সেটা বর্তায় কি না সে ছিল এক বিরাট প্রশ্ন। তবু তারা নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সেটি পরিশোধ করে আসছেন। বাকি সারাটা জীবন পরিশোধ করে যাবেন। কিন্তু তাদের প্রতি রাষ্ট্রের কোন দায় দৃশ্যমান নেই।

গতদিন আমাদের প্রিয় দৈনিক শিক্ষাডটকম পত্রিকায় দেখলাম বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারিদের বলা নেই কওয়া নেই, তাদের কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা তহবিলে ৬ শতাংশের পরিবর্তে চলতি জুন মাস থেকে ১০ শতাংশ করে কেটে নেয়া হবে। কী জবরদস্তি! অন্ততঃ বলে- কয়ে, বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিতে হবে না? একেবারে যেদিন গেজেট, তার ও কুড়ি দিন আগে থেকে কার্যকর!

যারা জেনেছেন, সকলেই বিস্মিত হয়েছেন। এ কেমন কায়- কারবার?  অনেকে মনে করছেন উল্টো রথে চড়া। তাদের বেতন কেটে কমিয়ে আনার সে এক ষড়যন্ত্র বৈ কিছু নয়। তাদের শত ভাগ স্কেলে বেতন দেয়া অনেকের গা সহে না। সে জ্বালা থেকে বেতন কমিয়ে ৯০ শতাংশ করার সে এক হীন প্রয়াস কি না কে জানে?

অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট নিয়ে শুরু থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা সকলের। শিক্ষক-কর্মচারিদের সর্বশেষ বিড়ম্বনার জায়গা এ দু’টি। এক সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ-পেনশন কিছুই ছিল না। অন্ততঃ শেষ বিড়ম্বনাটা ছিল না। অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হবার পর থেকে শিক্ষক-কর্মচারিদের শেষ জীবন নিয়ে স্বপ্ন যেমন প্রসারিত হয়েছে, তেমনি পরিণত বয়সের বিড়ম্বনা ও হতাশা অনেক বেড়েছে। অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ফান্ডে নিজের দেওয়া চাঁদার টাকা পেতে বছরের পর বছর পরের হাতের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এ দু’জায়গায় এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারি তাদের দাদার বয়েসী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারির কাজটা বিনে পয়সায় করে দিতে চায় না। শিক্ষক-কর্মচারিদের আবেদন জমা দিতে ও বিড়ম্বনা। শুনেছিলাম, অনলাইনে আবেদন করার সিস্টেমের কথা। তাহলে আবার হাতে হাতে জমা রাখা হয় কেন? আবেদন অনলাইনে জমা দেয়া বাধ্যতামুলক হলে যে কেউ ঘরে বসে কিংবা নিজের সুবিধাজনক জায়গা থেকে আবেদন পাঠাতে পারে। না হয় প্রত্যেক জেলায় একটা করে আঞ্চলিক অফিস থাকলে দূর-দূরান্ত থেকে কষ্ট করে ঢাকা যাবার প্রয়োজন পড়ে না। সময়-সুযোগে এক-আধটু খোঁজ-খবর রাখা যায়। কর্তৃপক্ষ এসব সহজ সরল পথ অনুসরণ করলে সুবিধাভোগীরা অন্ততঃ শেষ নিঃশ্বাসটা স্বস্তির সাথে ফেলে যেতে পারতেন।

শিক্ষক-কর্মচারিগণ অবসরে যাবার তিন মাসের মধ্যে কিংবা বড়জোর ছ’ মাসের মধ্যে যদি কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার টাকা হাতে না পান, তাহলে এ টাকা দিয়ে তারা কী করবেন? সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারির ১০ শতাংশ চাঁদায় এক বছরে কত টাকা হয় সে কি কেউ হিসেব করে মোট করেছেন?  অন্যদিকে, এক বছরে কতজন শিক্ষক-কর্মচারি অবসর গ্রহণ করেন এবং তাদের সব সুবিধা মিটিয়ে দিতে কত টাকা লাগে? এ হিসেবটা সঠিকভাবে কষলে তিন মাসের মধ্যে অবসরপ্রাপ্তদের সব সুবিধা মিটিয়ে দেয়া কোন কঠিন কাজ হবে না। ইচ্ছে করলে অবসর গ্রহণকারীর শেষ এমপিও কিংবা ঠিক পরের এমপিওতে দিয়ে দেয়া যায়। প্রয়োজনে সরকারের কাছ থেকে একটু ভর্তুকি চেয়ে নেয়া যেতে পারে। তবু, সেটার তেমন একটা প্রয়োজন পড়বে বলে মনে হয় না।

কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে না পারলে সব দুর্নাম সরকারের আর যত দুর্ভোগ শিক্ষক-কর্মচারিগণের হবে। কেবল শিক্ষক-কর্মচারিদের ওপর চাঁদার বোঝা বাড়িয়ে কতটুকু কী হবে সে কেবল ভবিতব্যই জানে। আপাততঃ সেটি সংশ্লিষ্টদের জন্য মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’র সামিল তাতে কোন সন্দেহ নেই।

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01598596572876