এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন কেন্দ্রেই ছাপানোর উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আগামী বছর থেকে এসএসসি ও এইচএসসির প্রশ্নপত্র স্থানীয়ভাবে কেন্দ্রেই ছাপিয়ে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি স্থান থেকে সারা দেশের সব কেন্দ্রে বিশেষ পদ্ধতিতে পাঠানো হবে ওই প্রশ্ন। এরপর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের সাহায্যে প্রশ্ন মুদ্রণ শেষ করে প্রশ্নপত্র তুলে দেয়া হবে পরীক্ষার্থীদের হাতে।  এ লক্ষ্যে তিনটি উপ-কমিটিসহ চারটি কমিটি কাজ করছে।

এ কাজের ভুলত্রুটি, চ্যালেঞ্জ, সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে চলতি বছর দুটি পরীক্ষায় এর পাইলটিং (পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) করা হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এ কাজের সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয়, কেন্দ্রীয় প্রশ্নভাণ্ডার বা প্রশ্নব্যাংক তৈরিসহ অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ তৈরির জন্য তিনটি উপকমিটিসহ চারটি কমিটি কাজ করছে। মূল কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। উপকমিটিগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

সচিব মো. সোহরাব হোসাইন  সভাকে বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস আমাদের বড় আকারে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতের প্রশ্ন ফাঁসের সব ঘটনা ও অভিযোগ পর্যালোচনা করে আমরা প্রশ্ন ছাপানো প্রক্রিয়ায় বড় আকারের পরিবর্তন আনি। আগে যেখানে ২১৮ জনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছাপানো হতো, সেখানে কয়েক বছর ধরে ১৮ জনের অংশগ্রহণে প্রশ্নপত্র ছাপাচ্ছি। এর ফলে আগের রাতে বা তারও আগে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এখন ট্রেজারি থেকে যখন প্রশ্নপত্র শিক্ষকের হাতে তুলে দেই, তারপরই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। এরপর সেখানেও কড়াকড়ি করে ফল তেমন একটা পাইনি। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপানোর বিকল্প এখন পর্যন্ত দেখছি না। এ কারণে আমরা সেদিকেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার টেস্ট ও প্রি-টেস্ট পরীক্ষা প্রশ্নব্যাংক থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রে নেয়া হবে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এ প্রক্রিয়া আমরা আগামী বছরের এসএসসিতে প্রয়োগ করব।’

বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইতিপূর্বে গত বছরের ১২ জুলাই গঠিত তিন উপকমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে সুপারিশ দাখিল করতে বলা হয়। ওই তিন কমিটি হচ্ছে, প্রশ্নব্যাংক তৈরি, প্রশ্ন প্রিন্টিং ও লজিস্টিক সাপোর্ট সংক্রান্ত। এর মধ্যে প্রশ্নব্যাংক তৈরি ও নিরাপত্তা উপকমিটির দায়িত্বে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১)। এ কমিটিতে আরও আছেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদসহ ১১ কর্মকর্তা। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে বিষয়, অধ্যায় ও প্রশ্নের মানবণ্টন অনুসারে সব বিষয়ের সম্ভাব্য প্রশ্ন প্রণয়ন করা। এরপর সব প্রশ্নের ডাটাবেস তৈরির মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় প্রশ্নব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা; যাতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে একাধিক প্রশ্ন সেট তৈরি করা যায়।

প্রিন্টিং ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা উপকমিটির প্রধান হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২)। এ কমিটিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। এ কমিটির দায়িত্ব হল পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য সফটওয়্যার তৈরি ও এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রশ্ন গ্রহণ ও পাঠানোর ব্যবস্থা করা এবং প্রশ্নপত্রে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্নপত্র মুদ্রণ করা।

লজিস্টিক সাপোর্ট উপকমিটিতে আছেন- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), মাদ্রাসা অধিদফতর ও কারিগরি অধিদফতরের তিন মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিব।

বুধবারের বৈঠকে এ তিন কমিটির কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমানকে। তিনি বলেন, আমরা অটোমেশন পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নিতে চাই। প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, এজন্য আমাদের যে খরচ হবে, তা বর্তমানে বিজি প্রেসে ছাপিয়ে পরীক্ষা নেয়ার তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে প্রশ্ন ছাপানোর জন্য কাগজ কেনা, বিজি প্রেসের বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের সম্মানী, প্রশ্ন পাঠানোর প্যাকেট, সিলগালা ও ট্র্যাঙ্ক কেনা, পাঠানোর পরিবহন খরচের কাজে নিয়োজিতদের সম্মানীসহ বড় অংকের অর্থ খরচ হয়। আর অটোমেশনে প্রশ্ন ছাপাতে গেলে পরীক্ষা কেন্দ্র ইকুইপড (যন্ত্রপাতি কেনা) করতে প্রয়োজনীয় যে খরচ হবে, সেটা অনেক কম হবে। বরং কেন্দ্রগুলোতে একবার কোনো জিনিস কিনে দিলে তা কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু উল্লিখিত উপাদান প্রতি পরীক্ষায় ও প্রতি বছরই কিনতে হয়। সেই খরচ কমে যাবে।

তিনি বলেন, উপকমিটিগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ সংক্রান্ত ব্যয়ের তুলনামূলক প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029652118682861