কোচিংয়ের প্রশ্নপত্রে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১৫ই ডিসেম্বর) শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনকে বরখাস্তের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন হাওলাদার। একইসাথে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাগেরহাট মডেল থানায় পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন।
গত ৯ই ডিসেম্বর ‘কোচিং সেন্টারের প্রশ্নপত্র দিয়ে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ’ শীর্ষক এক সংবাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রকাশিত হয়। জানা যায়, বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ের পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেল্লাল হোসেন তাঁর কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্ট পরীক্ষা যে প্রশ্নপত্র দিয়ে নিয়েছিলেন বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষাতেও একই প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন বলে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছিল সেদিন।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখার সহকারি প্রধান শিক্ষক মাওলানা শেখ আমজাদ হোসেনকে প্রধান করে তদন্ত করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে স্কুলের প্রভাতি ও দিবা শাখায় দুজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তার মধ্যে মোঃ বেল্লাল হোসেনকে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। গত ৯ ডিসেম্বর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়’ পরীক্ষায় খণ্ডকালীন শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের কোচিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত মডেল টেস্টের প্রশ্নপত্রে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তদন্তে সত্যতা পেয়ে স্কুলের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে তাকে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করে।”
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ওই তদন্ত প্রতিবেদন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের কাছে জমা দেওয়া হলে তিনি নিয়ম মেনে বেল্লালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। এছাড়া টিচার্স কাউন্সিলের জরুরি সভায়ও একই দাবি ওঠে।
নিয়োগ বিধি মেনে তাকে চাকরিচ্যুত ও বাগেরহাট মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে বলে আব্দুল মতিন জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাগেরহাট মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার দুপুরে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন হাওলাদার বাদী হয়ে ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনে বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং আসামিকে ধরতে অভিযান চলছে বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, শিক্ষক বেল্লাল হোসেন প্রশ্নপত্র ফাঁস করে যে অপরাধ করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই তাকে শুধু চাকরিচ্যুত করলেই হবে না; ভবিষ্যতে কোন শিক্ষক যাতে এ ধরনের অপরাধ আর করতে না পারে সেজন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।