কৌশলে ‘অনুমতি’ নিয়ে মানহীন কলেজে ভর্তি

রাশেদ রাব্বি |

শর্ত পূরণ না করায় ৯টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৮টিই পুনরায় কৌশলে শিক্ষার্থী ভর্তির ‘অনুমতি’ পেয়ে যায়। তিনটিকে শর্তসাপেক্ষে খোদ মন্ত্রণালয়ই অনুমতি দেয়। বাকি পাঁচটি কলেজ আদালতে রিট করে অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এরই মধ্যে এসব মেডিকেল কলেজে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তবে প্রথমে ভর্তি হলেও এখন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ যে কোনো সময় স্থগিতাদেশ পুনর্বহাল হলে তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময় চিকিৎসা শিক্ষায় ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও এভাবে উতরে যাচ্ছে মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ বলেন, শর্তসাপেক্ষে কিছু মেডিকেল কলেজের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণ না করলে ভর্তি স্থগিতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে যেগুলো উচ্চ আদালতে রিট করে আদালতের অনুমতি নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে, সেগুলো আইনিভাবে আমরা মোকাবেলা করছি। তিনি বলেন, এসব মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের যদি রেজিস্ট্রেশন না হয়, তার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদফতর নেবে না।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী কলেজ পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষার্থীর সংখ্যানুপাতে শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ ও ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির কারণে গত বছরের ২৬ অক্টোবর ৯টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এসব মেডিকেল কলেজ শর্ত পূরণ না করলে কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না।

কলেজগুলো হল- রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ, ঢাকার আদ্-দ্বীন বসুন্ধরা মেডিকেল কলেজ, আশিয়ান মেডিকেল কলেজ, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ, নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কেয়ার মেডিকেল কলেজ, আইচি মেডিকেল কলেজ ও সাফেনা উইমেন্স ডেন্টাল কলেজ।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘শর্তসাপেক্ষে’ দুটি বেসরকারি মেডিকেল ও একটি ডেন্টাল কলেজসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানে চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০১৭-২০১৮) এমবিবিএস প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে। কলেজগুলো হল- কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ এবং রাজধানীর মালিবাগের সাফেনা উইমেন্স ডেন্টাল কলেজ। কলেজগুলোকে ৩০ জুনের মধ্যে শর্ত পূরণের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, স্থগিত ঘোষিত ৯টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের কোনোটির ওপর থেকেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ, ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেই। তবুও ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ তিনটিতে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এদিকে আইচি মেডিকেল কলেজ ছাড়া বাকি পাঁচটি কলেজ মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি পায়। ফলে নীতিমালা অনুযায়ী মান রক্ষা না করে তারাও শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এরই মধ্যে ৮টি কলেজে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।

এসব বিষয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক নেতা  বলেন, যেসব মেডিকেল কলেজ ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাদের তুলনায় বাকিগুলোর অবস্থা ভালো। তাই শর্তসাপেক্ষে যদি তাদের সুযোগ দেয়া যেতে পারে, তাহলে বাকিদের অপরাধ কী। তারা সবার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সমান দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করেন।

তাদের মতে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের দ্বিমুখী নীতির কারণেই মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা টেকেনি। ফাঁকফোকর বের করে অন্য কলেজগুলো উচ্চ আদালতে রিট মামলা করে অনুমতি পেয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবই স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় মেধাতালিকা অনুসরণ না করেই শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এমনকি সরকার নির্ধারিত ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার চেয়ে বেশি ভর্তি ফি নিয়েছে।

এসব মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ শুরু করেছেন। শিক্ষাক্রম চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান যদি চূড়ান্ত অনুমোদন না পায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের কী হবে, সে বিষয়ে চিন্তিত তারা। এমনকি এসব শিক্ষার্থীর নিবন্ধন হবে কিনা, সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে পারছেন না। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কবে ঠিক হবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে গঠিত ওভারসাইট কমিটির একজন সদস্য এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মান পরিদর্শনে ওভারসাইট কমিটির তিনজনকে কো-অপ্ট করা হয়। এ কমিটি বেশ কয়েকটি কলেজ পরিদর্শন করে। তবে সব এখনও শেষ হয়নি। এমনকি পরিদর্শন সংক্রান্ত কোনো চূড়ান্ত সভাও হয়নি। এরই মধ্যে কয়েকটি কলেজকে অনুমোদন দেয়ার বিষয় শুনেছি। তবে এমন কেন করা হল, তা জানি না।

 

সৌজন্যে: যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026230812072754