গাইড বই থেকে এইচএসসির প্রশ্ন করেও রক্ষা পাচ্ছেন শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরাসরি গাইড বই থেকে তুলে দিয়েছেন চলতি বছরের এইচএসসির প্রশ্ন। অনুসন্ধান ও তদন্তে প্রমাণিতও হয়েছে কিন্তু টিকিটিও ধরা যাচ্ছে না বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচজন শিক্ষকের। কারণ, তাদের পক্ষে নেমেছেন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব ও নো বিসিএস নো ক্যাডার স্লোগান দিয়ে কলেজ জাতীয়করণে বাঁধা সৃষ্টিকারী শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা।

অপরদিকে, একই অভিযোগে অভিযুক্ত দশ বেসরকারি কলেজ শিক্ষকের এমপিও বন্ধ হচ্ছে।

গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন করার অভিযোগের তদন্ত শেষ করে আন্তশিক্ষাবোর্ড কমিটির প্রধান ও ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান গত অক্টোবর মাসে লিখেছেন, ‘এই শিক্ষকদের এই কাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি প্রচণ্ডরকম ক্ষুন্ন হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা যাচ্ছে।’ কিন্তু দৈনিকশিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ঢিলেমি করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। তথ্য গোপন করা হচ্ছে। ফাইল লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। সাংবাদিকদের তথ্য দিচ্ছে না মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা। অধিদপ্তর থেকে দৈনিকশিক্ষাকে জানানো হয়, ‘পিডিএস-এর সফটওয়্যার বিট্রে করছে তাই কোনো বি সি এস ক্যাডার কর্মকর্তার তথ্য দেয়া যাচ্ছে না।’ 

তিন সপ্তাহ আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক চিঠি পাঁচ শিক্ষকের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে। এর পরপরই তৎপর হয়েছেন অভিযুক্তরা। ইতিমধ্যে তাদের হাতেও পৌঁছেছে অভিযোগ ও বিভাগীয় ব্যবস্থার চিঠি। এটা পেয়েই  তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালাল উদ্দিনের দরবারে। শুনানীতে গিয়ে তদবির করে পাবেন রক্ষা। মোল্লা নিজে একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ায় অভিযুক্তদের প্রতি স্বজনপ্রীতি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিসিএস শিক্ষকদের সমিতির মহাসচিব সাক্ষাত করেছেন মোল্লার সঙ্গে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে ‘এই পাঁচ শিক্ষক নিদোষ, সব দোষ এমপিওভুক্ত দশজন শিক্ষকের। কারণ, তারাই মূল প্রশ্ন কর্তা। বিসিএস শিক্ষকরা শুধু মডারেশন করেছেন।’

দৈনিক শিক্ষার হাতে থাকা তদন্ত প্রতিবেদন ও শাস্তির সুপারিশ করে ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যানের চিঠিতে বলা হয়, ‘চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের একটি বিষয়ে সরাসরি গাইড বই থেকে প্রশ্ন করেছন তারা। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রও গাইড বই থেকে প্রণয়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।’

অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন ঝিনাইদহের সরকারি নুরুন্নাহার মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আনিছুর রহমান, যশোরের সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক এস এম তালেবুল ইসলাম, নওগাঁ সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার সাহা, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল মজন চৌধুরী এবং নাটোরের এনএস সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম।

বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এই পাঁচ শিক্ষকের কাছে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, গাইড থেকে প্রশ্ন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়, রাজশাহী বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথম পত্র বিষয়ের বহুনির্বাচনী অংশে ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর প্রশ্ন ও উদ্দীপকে হুবহু গাইড বই থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে।

অপরদিকে এমপিও বাতিল হচ্ছে  বিভিন্ন কলেজের দশজন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা  নিষিদ্ধ ঘোষিত নোট-গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও মডারেশনের দায়িত্বও ঠিকভাবে পালন করেননি সংশ্লিষ্টরা। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের  যশোর ও রাজশাহী বোর্ড প্রণীত এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনের দায়িত্বে ছিলেন তারা। বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে তাদের এই দায়িত্বহীনতা। ৭ ই নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এই দশ শিক্ষকের এমপিও বাতিলের ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

গাইড বই থেকে বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্ন: ১০ শিক্ষকের এমপিও বাতিল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023119449615479