চলতি বছরের শুরুতে লক্ষাধিক লোক নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেকার যুবকদের জন্য সুখবর। চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন পদে লক্ষাধিক জনবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে বিপুল সংখ্যক জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরের শেষ দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দিয়ে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে শূন্য পদে নিয়োগে প্রদানের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডি ও পত্র নং-০৫.০০.০০০০.১১১.০৯.০১৪.১৭.৮৮৬ স্মারকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কর্মসংস্থানে সৃষ্টির বিকল্প নেই। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে যুবসমাজের মুক্তি ও দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার নানামুখী যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে দ্রুততার সঙ্গে শূন্য পদ পূরণের জন্য সচিবদের ব্যক্তিগত তদারকি করতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে কেবল সরকারী চাকরিতেই তিন লাখ ৫৯ হাজার ২৬১টি পদ শূন্য রয়েছে, যা মোট পদের ২১ শতাংশেরও বেশি। শূন্য পদগুলোর মধ্যে ৪৮ হাজার ২৪৬টি প্রথম শ্রেণীর, ৫৪ হাজার ২৯৪টি দ্বিতীয় শ্রেণীর, এক লাখ ৮২ হাজার ৭৩৭টি তৃতীয় শ্রেণীর এবং চতুর্থ শ্রেণীর পদ ৭৩ হাজার ৯৮৪টি। সরকার অনুমোদিত ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪২টি পদের বিপরীতে বর্তমানে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৮ কর্মরত আছেন, যার ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারী। জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে তিন হাজার ১২০টি এবং অধিদফতর ও পরিদফতরে দুই লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৭ টি পদ শূন্য রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ৪৪৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্পোরেশনে শূন্য রয়েছে এক লাখ ৭ হাজার ১৮৯টি পদ।

এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর এক লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৮১৭ কর্মকর্তা। দ্বিতীয় শ্রেণীর এক লাখ ৭৩ হাজার ১৮৫টি পদের বিপরীতে এক লাখ ৪২ হাজার ৭৬৩, তৃতীয় শ্রেণীর ১০ লাখ দুই হাজার ৪০৯টি পদের বিপরীতে আট লাখ ৩৮ হাজার ৯৯২ এবং চতুর্থ শ্রেণীর তিন লাখ ২৩ হাজার ৩৬৭টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৮৬৬ কর্মরত।

সরকারের ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৮ জন কর্মচারীর মধ্যে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারী, সংখ্যার হিসেবে দাঁড়ায় তিন লাখ ৭০ হাজার ৫৮১। নারী কর্মচারীদের ২৩ হাজার ৬৩৭ জন প্রথম শ্রেণীর, ৫৩ হাজার ৪১ দ্বিতীয় শ্রেণীর, দুই লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ তৃতীয় শ্রেণীর এবং ৪৭ হাজার ৯১ চতুর্থ শ্রেণীর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার জন্যই প্রায় সাড়ে তিন লাখ পদ শূন্য পড়ে আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদগুলোতে সরকারী কর্মকমিশন নিয়োগ দেয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে যেন কোন পদ শূন্য পড়ে না থাকে সে বিষয়ে সরকারের নজর রয়েছে বলেও জানান তিনি। কোটাভিত্তিক পদগুলোই বেশি শূন্য রয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, শূন্য পদগুলো দ্রুততার সঙ্গে পূরণে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন কোটায় নিয়োগে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় সরকার বিশেষ বিসিএস নিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দিতে আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা এবং পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসের ৭৯২টি পদ খালি থাকে।

গত ২১, ২২ ও ২৫তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত কোটার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮, ২ দশমিক ২ ও ৫ দশমিক ২ ভাগ পূর্ণ হয়। আর ২৮তম বিসিএসে পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডারে বিভিন্ন কোটায় ৮১৩টি পদের জন্য কোন যোগ্য প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। পরে এসব পদে নিয়োগ দিতে ৩২তম বিশেষ বিসিএস হয়। ৩৬তম ব্যাচে কৃষি, শিক্ষা, মৎস্য ক্যাডারে ৩৬৬টি পদে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। ৩৭তম ব্যাচের একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেখানেও পেশাগত ও কারিগরি পদে ডাক্তার, কৃষি, প্রকৌশলী, মৎস্য, পশুপালন ও শিক্ষক পদে ৭৬১টি পদ শূন্য থাকতে যাচ্ছে। এর আগেও ২০০০ সালে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেয়া হয়েছিল।

২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। তবে অধ্যাদেশ জারির কারণে তা ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

২০১১ সালের শেষে সরকারী কর্মচারীদের চাকরির বয়স বাড়ার ফলে গত তিন বছরে অল্প সংখ্যক সরকারী চাকুরে অবসরে গেছেন। ফলে প্রবেশ পদে লাখ লাখ প্রার্থী সরকারী চাকরি নামক ‘সোনার হরিণের’ সন্ধানে রয়েছেন, দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। গড়ে ৩৭তম বিসিএসএ একটি পদের বিপরীতে ২৩৭ জন, ৩৬তম ব্যাচে প্রতি পদের বিপরীতে ২০৯ জন, ৩৫তম বিসিএসে একটি পদের জন্য ১৩৫ জন এবং ৩৪তম বিসিএসে একটি পদের বিপরীতে ১০৭ চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002802848815918