ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগারে

আসিফ আহমেদ |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার বলা হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নেমে আসে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ এ দাবিতে আহূত হরতাল সফল করে তোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সামনের সারিতে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা থেকেই ১৪৪ ধারা ভেঙে বের হয় ঐতিহাসিক মিছিল, যা সফল পরিণতি লাভ করেছিল। এর পর ১৯৬২, ১৯৬৪ ও ১৯৬৯ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, তার নেতৃত্বে ছিল দেশের অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ এ প্রতিষ্ঠানের কলাভবন প্রাঙ্গণের ঐতিহাসিক বটতলায় বাংলাদেশের যে ‘জাতীয় পতাকা’ উত্তোলন করা হয়; দেশের নির্বাচিত নেতৃত্ব সেটাকেই দেশের পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এ যে পরম গৌরবের, অনন্য মর্যাদার।

সত্তর ও আশির দশকে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাই সর্বপ্রথম সামরিক শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানায়। তবে সময়ের বিবর্তনে ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটেছে। জাতীয় রাজনীতিতে এখন রাজনৈতিক নেতাদের উদ্যোগ আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করি। ছাত্র সংগঠনগুলো পরিণত হয়েছে তাদের ‘অধিভুক্ত’ সংগঠনে। তারা স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়েছে। পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যখন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কথা বলতেন, সেটা বিশেষ গুরুত্ব পেত। ছাত্রদের উপেক্ষা করার কথা রাজনৈতিক নেতারা ভাবতেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এক দল শিক্ষার্থী আন্দালনে রয়েছে। তাদের দাবি- ‘অধিভুক্ত’ রাজধানীর সাতটি কলেজের নাম এ প্রতিষ্ঠান থেকে খারিজ করে দিতে হবে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের কিছু সুবিধা ভাগাভাগি করে নিতে গিয়ে রীতিমতো ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। অন্যদিকে, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দাবি- তাদের অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা সময়মতো অনুষ্ঠিত হতে হবে। ফল প্রকাশেও বিলম্ব করা চলবে না।

দু’পক্ষের আন্দোলনের ইস্যুই শিক্ষা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেই থাকতে এবং এ প্রতিষ্ঠান তাদের সুবিধাদি যেন আরও মনোযোগ দিয়ে দেখে- তার নিশ্চয়তা চায়। উভয় পক্ষের বক্তব্যেই যুক্তি আছে। কীভাবে এর সমাধান করা হবে, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলন আমরা তেমন দেখি না। অধিভুক্ত সাতটি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কয়েক মাস আগে তাদের পরীক্ষা গ্রহণের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। সে সময়ে পুলিশের টিয়ার গ্যাস শেলের আঘাতে এক ছাত্রের চোখ চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। তারও কিছুদিন আগে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ‘শিক্ষায় ভ্যাট দেব না’ ইস্যুতে রাজপথ কাঁপিয়েছিল। এখন আবার এক দল ছাত্রছাত্রী শিক্ষার দাবিতে সক্রিয় হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দাবি ও অধিভুক্ত সাতটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দাবি কেবল ভিন্ন নয়; সম্পূর্ণ বিপরীত। এ থেকে স্পষ্ট যে, ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগারকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার সম্ভাবনা নেই। সরকার কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য এটা হয়তো স্বস্তির বিষয়। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, উভয় পক্ষের দাবির পেছনে নিজ নিজ অঙ্গনের বিপুল শিক্ষার্থীর সমর্থন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটা হচ্ছে শিক্ষার সমস্যা। সংশ্নিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ মিলেই এর সমাধান বের করতে হবে। শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কাছেও এটা বড় ধরনের ইস্যু হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

 

সৌজন্যে: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023958683013916