ছাত্র-রাজনীতির সোনালি ইতিহাস ফিরিয়ে আনুন

মো. সেলিম রেজা |

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ ৭ জুন ৬ দফা দিবস উপলক্ষে  ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি কলাম লিখেছেন। কলামের বিষয়বস্তু ছিল ছয় দফা কিভাবে আমাদের মুক্তির সনদ হয়ে উঠলো। তোফায়েল আহমেদের কলাম পড়ে এক নতুন ইতিহাস জানতে পারি। তত্কালীন সময়ে ছাত্রলীগ খুবই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আমরা বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে পড়েও জানতে পারি সেই সময়ের ছাত্র-আন্দোলনগুলোতে ছাত্রলীগের অবদান অসামান্য। বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগও তাদের পূর্বসূরীদের পথ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে সাহস ও সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে তোফায়েল আহমেদ স্যারের সময়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ থাকতো এবং তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাউন্সিল করে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বলা হলেও নির্ধারিত সময়ের বাধ্যবাধকতা মানা হয় না। বিগত দশটি কমিটির মেয়াদকাল ও দায়িত্ব হস্তান্তর বিশ্লেষণ করলেই এই দাবির সত্যতা মিলবে।

বর্তমান কমিটির আগের কমিটিতে দায়িত্বে ছিলেন বদিউজ্জামান সোহাগ সভাপতি হিসেবে এবং সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। তারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১১ সালে এবং দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ২০১৫ সালে। অর্থাত্ তারা প্রায় দুই কমিটির সমান মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার আগের কমিটিতে ছিলেন মাহাফুজুল হায়দার সভাপতি ও মাহামুদুল হাসান সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটিও প্রায় দুই মেয়াদে যেমন ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

লিয়াকত শিকদার ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০২ সালে এবং দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তার কমিটির মেয়াদকালও ছিল চার বছর। তার পূর্বে এনামুল হক শামীম কমিটির মেয়াদ ছিল চার বছর ১৯৯৪-১৯৯৮।

সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসেন কমিটির দুইবছর মেয়াদ প্রায় শেষ হবার পথে। যদি গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই এই কমিটি চালাতে হয় তাহলে তাদের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিল আয়োজন করে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। অথবা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কমিটির মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে চার বছর করা। কারণ বিগত ছাত্রলীগের তিনটি কমিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তাদের মেয়াদকাল ছিল গড়ে চার বছর করে। কিন্তু গঠনতন্ত্রে কমিটির মেয়াদ দুই বছর থাকা এবং চার বছর কমিটির দায়িত্বে থাকা কোনোভাবেই একটি সংগঠনের জন্য ভালো ফল দিতে পারে না। নিয়মিত কাউন্সিল হলে অবশ্যই প্রতি দুইবছর অন্তর যোগ্য নেতৃত্ব বের করে আনা সম্ভব। কেনই-বা সম্ভব হবে না যখন তোফায়েল আহমেদ স্যারেরা পাকিস্তান আমলে প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাউন্সিল করতে পারলে বর্তমান নেতৃত্ব অবশ্যই পারবে।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বয়স মোটামুটি ২৭-এর মধ্যে থাকলেও ছাত্রদল কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বয়স অস্বাভাবিকভাবে বেশি। বর্তমান ছাত্রদল কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের বয়স ৩৮ বছর। আমার মনে হয় এত বয়স পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব থাকা উচিত নয়। তাহলে নিয়মিত ছাত্ররা নেতৃত্ব-শূন্যতায় ভুগবে। ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রায় আট মাস আগে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠনের কোনো প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু দেখা যায়, ছাত্রফ্রন্ট বা ছাত্র ইউনিয়নের কমিটি এখনো প্রতিবছর গঠিত হয়। গতিশীল সংগঠনের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত নেতৃত্বের নির্বাচন। দীর্ঘদিন একই কমিটি দিয়ে দায়িত্ব পালন করলে অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সংগঠন চালালে সংগঠনে স্থবিরতা নেমে আসে। নিয়মিত নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে সংগঠন থেকে অনেক ভালো ভালো জাতীয় নেতা তৈরি হবে নতুবা সংগঠনে নেতৃত্ব-শূন্যতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। যদি সিন্ডিকেটই কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন করে তাহলে সংগঠনের গণতান্ত্রিক চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়। দলের মধ্যে একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে উঠবে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সংগঠন।

ঔপনিবেশিক বা পাকিস্তান শাসনামলে বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় যদি রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠন করতে পারে তবে স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে সেটা কেন সম্ভব হবে না? প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার, তাহলে ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের সংগঠন চালাতে পারবে। আর কোনো অনিয়ম আমরা দেখতে চাই না ছাত্ররাজনীতি নিয়ে। একবিংশ শতাব্দীতে বিবাদমান সমাজ ও রাষ্ট্রের হাল ধরতে হবে এই ছাত্রসমাজকেই। তাই ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে অনুরোধ- ছাত্ররাজনীতির অতীত সোনালি ইতিহাস ফিরিয়ে আনুন। ছাত্ররাজনীতিতে শুধু দলের কথা বললে হবে না। সম-সাময়িককালে ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আপনাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। দেশ গড়ার তাগিদে সকল ছাত্রসংগঠন নিজেদেরকে শুধরে নিয়ে আগামীদিনের সোনার বাংলা গড়ার কাজে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে সেই প্রত্যাশা করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047628879547119