সব যোগ্যতা অর্জন করার পরও ২০০৯ সালের পর থেকে জাতীয়করণ হওয়া ৪৬ কলেজের আড়াই শতাধিক শিক্ষকের নিয়োগ না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও বিসিএস শিক্ষা সমিতির কতিপয় নেতা এই নিয়োগের অন্তরায় বলে জানা গেছে। তাদের নিয়োগ না দেয়ার স্পষ্ট কোনো কারণ না বলেও দিনের পর দিন তাদের ঘুরানো হচ্ছে। বাধ্য হয়ে এসব শিক্ষক আন্দোলনে নেমেছেন। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাসের সামনে তারা মানববন্ধন করেছেন। দ্রুত তাদের নিয়োগ না দিলে বৃহৎ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৬টি কলেজ আত্তীকরণ হয়েছে। এসব কলেজে সরকারি বিধি মোতাবেক বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া সব শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ হওয়া কথা। কিন্তু সব যোগ্যতা অর্জন করার পরও তথাকথিত কাম্য যোগ্যতার নামে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, এর আগে কিছু শিক্ষককে আদালাতের শরণাপন্ন হয়ে নিয়োগ পেতে হয়েছে। আমরাও কী সেই আদালাতের দিকে যাবে?
ভুক্তভুগী একজন শিক্ষক বলেন, একটি গোষ্ঠী জাতীয়করণের মতো সরকারের মহৎ একটি উদ্যোগকে ভেস্তে দিতে চায়। এজন্য তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, যোগ্যতা ছিল না, তারা বিগত বছরগুলো সব যোগ্যতা অর্জন করার পরও শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের নিয়োগ দিচ্ছে না। আমরা আদালতে যেতে চায় না, আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে চাই।
জানা গেছে, যশোরের শার্শা সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে বেসরকারি আমলে কর্মরত ৭ জন শিক্ষকের পরিদর্শনের সময়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না, কিন্তু ২০১৪ সালে মানোন্নয়নের মাধ্যমে এ্যাডহক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজের তিন বছরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করার পর তাদের পদ সৃজন করা হয়। আদালত কর্তৃক অর্ডারের প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলাধীন মহেশপুর ডিগ্রি কলেজের পাঁচজনকে মানোন্নয়নসাপেক্ষে নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ একই পদ্ধতিতে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষক কাম্য যোগ্যতা অর্জন করার পরও তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
সরকারি নগরকান্দা কলেজের উপাধ্যক্ষ ও সহকারী অধ্যাপক মনোরঞ্জন বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক আব্দুল লতিব, ইংরেজি প্রভাষক সুনিল কুমার বিশ্বাস, ফরিদপুরের ভাঙ্গা কেএম সরকারি কলেজের সমাজকল্যাণের প্রভাষক গাবিনা ইয়াসমিন, নজরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল ইব্রাহিম খাঁ কলেজ সরকারি কলেজের সমাজকল্যাণের বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলাম, যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজের সমাজকর্মের প্রভাষক একেএম আলমগীর, অর্থনীতির প্রভাষক শেখ আব্দুল্লাহ ফারুক, রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের সমাজকল্যাণের প্রভাষক আইরিন পারভীন, ব্যবস্থাপনার প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ, মার্কেটিং বিভাগের হারুণ অর রশিদ সিদ্দিকীর মতো আড়াই শতাধিক শিক্ষক সব যোগ্যতা অর্জন করার পরও তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আত্তীকরণে নিয়োগ বিধিতে বলা ছিল শিক্ষক, অশিক্ষকদের কী যোগ্যতা থাকতে হবে। যাদের যোগ্যতা আছে তারা আত্তীকরণ হয়েছেন। যাদের নেই, তাদের বলা হয়েছে, যোগ্যতা অর্জন করার জন্য। যোগ্যতা অর্জন করলে অটোমেটিক আত্তীকরণ হয়ে যাবেন। এটা নিয়ে হয়রানির করার কোনো সুযোগ নেই। মাউশিতে কেউ যদি এ ধরনের হয়রানি করে, তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলেন মহাপরিচালক।