বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ বাতিল করে নতুন বিধিমালা চায় জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষক সমিতি।
নতুন বিধিমালা প্রণয়নে নয়টি প্রস্তাবসহ শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ কেন বিতর্কিত তার ব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে সমিতি।
চিঠিটি দৈনিক শিক্ষার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল। আজ পড়ুন শেষ পর্ব।
ধারাঃ ৬ (চাকুরী নিয়মিতকরণ) কেন বিতর্কিত?
(ক) যেহেতু আত্মীকৃত শিক্ষকরা PSC কর্তৃক সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত নন এবং যেহেতু আত্মীকৃত শিক্ষকরা চাকুরীতে প্রবেশের ০২ বছর পর সরকার অনুমোদিত গভর্ণিং বডি দ্বারা সন্তোষজনক চাকুরীর ভিত্তিতে একই চাকুরীতে একবার নিয়মিত হয়েছেন সেহেতু নতুন করে PSC কর্তৃক সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়মিতকরণ যুক্তিযুক্ত নয়। তাই কার্যকাল চাকুরীসহ সরকারি চাকুরীতে যোগদানের তারিখ থেকে আত্মীকৃতদের স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিয়মিত করন হওয়া উচিত।
(খ) ক্যাডার বহির্ভূত পদ রাখার বিধানটি গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ, এই বিধান প্রয়োগ করলে একই সরকারি কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার এই দুই শ্রেণির উদ্ভব হবে। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে কোন্দলসহ আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার বর্তমানে ক্যাডার সিডিউল বহির্ভূত কোন পদের অস্তিত্ব নেই।
ধারাঃ ৭(১) (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি):
(ক) জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে ‘‘কার্যকর চাকুরীকাল’’ গণনা না করে নিয়মিত করনের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা গণনার বিধান স্ববিরোধী। ‘‘কার্যকর চাকুরীকাল’’ জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে বিবেচিত না হলে তা কি করে ‘‘কার্যকর’’ হয় বোধগম্য নয়। লক্ষনীয় যে, একই বিধিমালার ২(গ) উপধারায় বেসরকারি চাকুরির ৫০% কার্যকর ধরে আবার ৭(১) উপধারায় জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তা অকার্যকর করা হয়েছে।
(খ) কার্যকর চাকুরীকাল জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে গণনা না করে আত্মীকৃত দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পূন্ন শিক্ষকদের (অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারি অধ্যাপক, সিনিয়র প্রভাষক) সরকারী চাকুরীতে নিয়মিত করার পর PSC কর্তৃক সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যাচের সর্বকনিষ্ঠ প্রভাষকের চেয়েও কনিষ্ঠ গণ্য করার বিধান অযৌক্তিক, অমানবিক ও বৈষম্যমূলক।
(গ) একজন কর্মরত অধ্যক্ষ যিনি ১৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক শিক্ষাগত যোগ্যতায় এবং ডিজি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ০২ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এবং নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে এবং উক্ত পরীক্ষায় প্রথমস্থান লাভ করে এবং নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের লিখিত পূর্বানুমতির চিঠির প্রেক্ষিতে এবং কলেজ গভর্ণিং বডি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এবং পুনরায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অধ্যক্ষ পদে যোগদানের অনুমোদন পেয়ে এবং ডিজি কর্তৃক অধ্যক্ষ পদের বেতন স্কেল পেয়ে এবং দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ পদে চাকুরী করে হঠাৎ কলেজ জাতীয়করনের কারনে আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ অনুযায়ী পদ ও জ্যেষ্ঠতা হারিয়ে প্রভাষক হয়ে যাবেন-এটি লজ্জাকর, অবমাননাকর, সম্মানহানিকর, অমর্যাদাকর এবং মৃত্যু সমতুল্য।
(ঘ) আরও লক্ষ্যনীয় যে, জাতীয়করন পূর্ব কলেজ পরিদর্শন সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র এবং Deed of Gift দলিলে স্বাক্ষরকারী কর্মরত অধ্যক্ষকে সরকার অধ্যক্ষ স্বীকৃত দিয়ে আত্মীকরনের তারিখ হতে প্রভাষক বানিয়ে দিবেন- এটা স্ববিরোধী।
(ঙ)আত্মীকৃত শিক্ষকগণ কারো পদে বা শূণ্য পদে এডহক নিয়োগ পাননা। তাঁরা তাঁদের নামের বিপরীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কর্তৃক সৃজিত স্ব স্ব পদে আত্মীকৃত হন। অন্যের কারো পদে বা কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করে তাঁরা চাকুরীতে প্রবেশ করেন না। বরং আত্মীকৃতদের পদ মৃত্যু বা অবসরজনিত কারনে শূণ্য হলে সেই পদেই শুধু PSC নিয়োগ দেন। PSC র কাজ শূণ্য পদে নিয়োগ দেওয়া। জাতীয়করনকৃত কলেজ এবং আত্মীকৃত শিক্ষকের সংখ্যা যত বাড়বে সময়ের বিবর্তনে ক্যাডারে শূণ্য পদের সংখ্যা তত বাড়বে অর্থাৎ আত্মীকৃতদের শূণ্যপদে সরাসরি নিয়োগের ফলেই আজ প্রায় ১৪ হাজার ক্যাডার Strength সৃষ্টি হয়েছে। তাই আত্মীকৃত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থতার কাল্পনিক অভিযোগ না তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাকে সানুনয় অনুরোধ করছি।
(চ) উল্লেখ্য যে, নতুন আত্মীকরণ বিধিমালা প্রনয়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যে আপনার কার্যালয়সহ মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও শিক্ষামন্ত্রনালয় বরাবর আবেদন করেছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি দপ্তর হতে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রনালয় বরাবর একটি পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনও হয়নি।
আমাদের প্রস্তাব সমূহঃ
১. আত্মীকরণ বিধিমালা-২০০০ বাতিল করে ১৯৮১, ১৯৯৮ এর আদলে নতুন আত্মীকরণ বিধিমালা প্রনয়ন করা।
২. সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত, এমপিওবিহীন, অনার্স ও মাষ্টার্স পর্যায়ে পাঠদানের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষকদের চাকুরিতে যোগদানের তারিখ হতেই ক্যাডারভুক্ত করে শিক্ষকদের আত্মীকরণ করা।
৩. চাকুরীতে যোগদানের তারিখ হতেই ১০০% কার্যকর চাকুরীকাল গণনার বিধান রাখা।
৪. এডহক নিয়োগ ও পরবর্তীতে নিয়মিতকরণে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগকালীন শিক্ষাগত যোগ্যতাকে ‘‘প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা’’ হিসাবে বিবেচনা করা।
৫. অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারি অধ্যাপক, টাইমস্কেল প্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক, প্রভাষকের নামের বিপরীতে জাতীয়করণপূর্ব স্ব স্ব একই পদ সৃজন পূর্বক উক্ত স্ব স্ব পদে ও উক্ত পদের বেতন স্কেলে আত্মীকরন করা।
৬. বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত পাসকোর্স ডিগ্রীধারী ও তৃতীয় শ্রেণী/বিভাগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের একই সাথে আত্মীকরণ করা এবং কোন শিক্ষকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তৃতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে তাঁদেরক স্ব স্ব পদে আত্মীকরণপূর্বক সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের পরবর্তী ০৩ বছরের মধ্যে ২য় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের শর্তে নিয়মিতকরণ এবং অর্জনে ব্যর্থদের পূর্বের পদেই বহাল রাখার বিধান করা।
৭. পূর্ববর্তী এক বা একাধিক কলেজের বৈধ নিরবিচ্ছিন্ন চাকুরীর অভিজ্ঞতা গণনা করা।
৮. জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি, টাইমস্কেল ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এডহক নিয়োগের পরবর্তী চাকুরীকাল এবং জাতীয়করন পূর্ববর্তী ১০০% কার্যকর চাকুরীকাল গণনা করা।
৯. নতুন আত্মীকরণ বিধিমালা প্রনয়ন, সংশোধন ও পরিমার্জন সংক্রান্ত কমিটিতে জাতীয়করণের লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতির দুইজন প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা।
শেষ
আরও পড়ুন
জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান
জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান (পর্ব-২)
জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান (পর্ব-৩)