জাবিতে বহিরাগতরা ঘটাচ্ছে নানা অনৈতিক ঘটনা!

জাবি প্রতিনিধি |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দিন দিন বাড়ছে বহিরাগতদের আগমন। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে নানা নেতিবাচক কর্মকান্ড, মাদকসেবন, চুরি ও নানা দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সজাগ থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশের কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে প্রশাসনের অবহেলাকেই দায়ী করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।তারা এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার (২১ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে সরোয়ার ও সোনিয়া নামক বহিরাগত এক যুগল মাইক্রো(ঢাকা মেট্রো-গ) ২৬-৩৭৫৪) নিয়ে ক্যাম্পাসে অগ্রণী ব্যাংকের সামনে মাতাল অবস্থায় এক রিকশাকে ধাক্কা দেয়। পরে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় মদসহ তাদেরকে আটক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

রোববার (২০ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পেছনে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের নেতৃত্বে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে দুই যুগলকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে দুইজন গার্মেন্টকর্মী।যারা ইজিপেড এলাকায় থাকেন। আর বাকি দুজন এসেছিলেন সাভার থেক।

বৃহস্পতিবার(১৭ আগস্ট)জহির রায়হান মিলানায়তনের পিছন থেকে এক বহিরাগত যুগল আটক করা হয়।

জাবিতে বহিরাগতরা ঘটাচ্ছে নানা অনৈতিক ঘটনা!

বৃহস্পতিবার(২৭ জুলাই) দুপুরে মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশ থেকে গাঁজা সেবনকালে রবিউল ইসলাম, হোসেন আলী ও শাকিলকে আটক করেন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের কাছ থেকে প্রায় ২৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

রোববার (২০ আগস্ট) সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের ভেতরে মাইক্রোবাস চালাতে গিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা দেয়। গাছের কারণে ও আশেপাশে লোক না থাকায় বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায় ওই শিক্ষার্থী।

৮ আগস্ট মঙ্গলবার স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে সি ৫৬ নম্বরে এক শিক্ষকের বাসার জানালার গ্রিল ভেঙ্গে একটি ল্যাপটপ, ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা, দুটি মোবাইল ফোন ও কিছু মূল্যবান জিনিস চুরির ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার(১৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতরে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোর সময় আটক করা হয় বহিরাগত চার শিক্ষার্থীকে। এদের কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়।

নিরাপত্তা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৮মাসে প্রায় ১৫০ বহিরাগত যুগলকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করা হয়। এছাড়া ৮ থেকে ১০জন বহিরাগতকে মাদকসহ আটক করা হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।কারণ এদের কেউ না কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্মীয়। তাদের অনুনয়ে এদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময় আটক এসব বহিরাগতের কাছে ইয়াবা, গাঁজা, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়।এছাড়া যুগলদের কাছ থেকে কনডম, পিলসহ বিভিন্ন ধরনের জন্মনিরোধকও পাওয়া যায়।জাবিতে বহিরাগতরা ঘটাচ্ছে নানা অনৈতিক ঘটনা!

অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, বহিরাগতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের লোকজনই বেশি। বিশেষ করে সাভার, জামসিং, নবীনগর, ইপিজেড, গেরুয়া ও ইসলামনগরের। এদের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রাইভেট পড়ুয়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়। বহিরাগতরা প্রথমে ক্যাম্পাসে এসে নিজেদের শিক্ষার্থী বলে  পরিচয় দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পিছনে, বোটানিকাল গার্ডেন, সুইমিংপুল অঞ্চল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকের পেছনে, জহির রায়হান মিলানায়তনের পেছনে, পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে জায়গাগুলোতেই এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি হয়ে থাকে। তিনি এসব অঞ্চলকে ‘ক্রাইম জোন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটের কাছে গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ক্ষমতাবান শিক্ষার্থীদের কারণে বহিরাগতরা গার্ডদের হুমকি ধামকি দিয়ে, এমন কি চড়াও হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ

করে। আর এইসব গাড়ি ও বহিরাগতরাই বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়। অনৈতিক অবস্থায় আটক করা হলেই ক্যাম্পাসে তাদের শেল্টার দেওয়ার মত অনেক লোক থাকে। ক্যাম্পাসের ক্ষমতাবান মহলের কেউ কেউ অনেক সময় ফোন করে হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের আত্মীয়দের কেন আটক করা হয়েছে তার কারণ জানতে চান।তখন ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

এদিকে বহিরাগতদের আগমন ও এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলে সমালোচনা।

দিদারুল হল নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে লেখেন, ‘একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ড হতে থাকে তাহলে সেখানে আর শিক্ষার পরিবেশ থাকে না।’

আব্দুল জলিল নামের আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘ক্যাম্পাসে আমরা অনিরাপদ, বহিরাগতরাই নিরাপদ। এত কু-কাজ ক্যামনে হয় ক্যাম্পাসে। কোন বা কারও পরিচয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে তারা। ’

আরেকজন শিক্ষার্থী লিখেন, ‘ক্যাম্পাস কি বহিরাগতদের মুক্তাঙ্গন হয়ে উঠছে নাকি দিন দিন। আজ মাতলামী করছে তো কাল জিমনেসিয়ামের কাছে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। এসব হচ্ছেটা কি।’

অন্য আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘ক্যাম্পাস এখন বিনোদন পার্কে পরিণত হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055921077728271