ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মানসম্পন্ন জনশক্তি তৈরিতে সহায়ক নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রদানেও এসেছে নানা পরিবর্তন। কিন্তু এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। ভালো অবস্থায় নেই শ্রেণীকক্ষও। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও তীব্র শব্দদূষণের মধ্যে পাঠ নিতে হয় শিশুদের। মানের দিক দিয়েও পিছিয়ে এসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ কারণে ঢাকায় গড়ে উঠছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যার মধ্যে ইংরেজি মিডিয়ামের আধিক্য চোখে পড়ে। বিদ্যমান অবকাঠামোয় মানসম্পন্ন আধুনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছে। ২০১৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যানবেইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর এ শিক্ষা ব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশই হয় বেতন-ভাতা বাবদ। ব্যানবেইসের তথ্যমতে, প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যয়িত অর্থের ৪ শতাংশও ব্যয় হয় না অবকাঠামো উন্নয়নে। অথচ অবকাঠামো সংকট মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়। শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে পাঠদানের পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ স্বস্তিকর ও আকর্ষণীয় না হলে শিশুরা বিদ্যালয়বিমুখ হবে, এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সরকার প্রতি বছর সফলভাবে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক ভূমিকা আন্তর্জাতিক পরিসরেও প্রশংসিত হচ্ছে। তবু কেন আমাদের শুনতে হয় অসংখ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ দশার কথা? বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা আছেন, আছেন নির্বাহী কর্মকর্তাসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে বিদ্যালয়গুলোর এ দীনদশা হতো না।

প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এডুকেশন-৯ (ই-৯) ফোরামভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, চীন, এমনকি ব্রাজিলের মতো দেশকেও পেছনে ফেলেছে। এ উদ্দীপনা ও শিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখতে হলে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিতকরণে সর্বাগ্রে অবকাঠামো সংকট দূর করতে হবে, বিদ্যালয়গুলোকে করতে হবে শিশুবান্ধব। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে বলে যথাযথ নজর না দিলেও চলবে, এমন মানসিকতা পরিহার জরুরি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এখনো শিশুদের শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। একে দুর্বল করে রাখা মানে শিক্ষার ভিত্তি দুর্বল থাকা। এর ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক মোকাবেলা করতে হবে শিক্ষার্থীদের। সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা প্রদানে সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিখন ও শিক্ষা প্রদানবিষয়ক পরিবেশের উন্নয়ন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে অবকাঠামো দুর্বলতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সবার জন্য শিক্ষাসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন, শতভাগ ভর্তি নিশ্চিতকরণ, ঝরে পড়ার হার হ্রাস, উপস্থিতির হার বৃদ্ধিসহ গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে সমস্যায় পড়তে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদাভিত্তিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, শিক্ষার্থী-শ্রেণীকক্ষ অনুপাত যৌক্তিকীকরণ, নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার ব্যবস্থা করা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসবাব সরবরাহ, শিক্ষায় সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা পরিবেশের উন্নয়ন ও প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিশুবান্ধব শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

সূত্র: বনিক বার্তা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052399635314941