মেধা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে পরীক্ষাব্যবস্থা নানা কারণে বিতর্কের জালে জড়িয়ে আছে।
প্রশ্ন ফাঁসের কারণে দুনিয়াজুড়ে আমাদের দুর্নাম হচ্ছে। নানা কারণে প্রশ্ন ফাঁস হয়। দ্রুত সেসব চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরীক্ষাব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে মানুষ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বহির্বিশ্বেও গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। তাই প্রশ্ন ফাঁস রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশ্নপত্র বছর বছর প্রণয়ন না করে দু-তিন বছরের জন্য প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করা যেতে পারে। সেখান থেকে প্রতিবছর পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে প্রশ্ন বাছাই করে ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়। প্রশ্ন ব্যাংক বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছাড়া অন্য কারো জন্য উন্মুক্ত থাকবে না। এতে প্রশ্ন ফাঁস কমবে। বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন প্রণেতাদের প্যানেল গঠন করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সমীচীন হবে। প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণের বিষয়ে আরো সতর্ক নজরদারি প্রয়োজন। অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। বোর্ডভিত্তিক নয়, জেলা বা অঞ্চলভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, ভেবে দেখা যেতে পারে।
পরীক্ষার রুটিন দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন নেই। আগে ১০-১২ দিনে পরীক্ষা শেষ হতো। এখন পাবলিক পরীক্ষা শেষ হতে প্রায় এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যায়। দীর্ঘ সময়ের কারণে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যত কম সময়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় তত মঙ্গল। পরীক্ষা শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লটারির মাধ্যমে সেট নির্ধারণ করে কেন্দ্র সচিবদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কপি ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়।
প্রতিটি বিষয়ের জন্য পৃথক পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে। লটারির আগ পর্যন্ত বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছাড়া অন্য কেউ এসব পাসওয়ার্ড জানবেন না।
পরীক্ষা মুখ্য না হয়ে জ্ঞানার্জন মুখ্য হলে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য কেউ অপেক্ষা করত না। শিক্ষার্থী তো বটেই, অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক প্রশ্নের সন্ধানে মোবাইল, ইন্টারনেট ও ফেসবুকে লেগে থাকেন। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন চাই। প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে এখন পর্যন্ত কারো বড় রকমের সাজা হয়নি। দু-একজনের যাবজ্জীবন হলে সবাই সতর্ক হয়ে যেত। শিক্ষা আইনে এ রকম কঠোর শাস্তির বিধান থাকলে ভালো হয়।
সোলায়মান শিপন
কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।