দাখিল ও আলিম মাদ্রাসার সহকারি গ্রন্থাগারিকদের ফরিয়াদ

অধ্যক্ষ ড. মোহাঃ এমরান হোসেন |

শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাঁর নিরলস চেষ্টায় শিক্ষা ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের জন্য তিনি ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার। মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি সংগঠন তাকে ‘শিক্ষাবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে।

শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়নে শিক্ষানুরাগী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বহুমুখী পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার কারণেই শিক্ষাক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন বলে আমরা মনে করি। আমরা তাঁর সুসাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। শিক্ষামন্ত্রীর সফলতার পিছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাপূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা। সে কারণে আমরা প্রধানমন্ত্রীকেও জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।

এ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেই না চাইতেই দাখিল মাদ্রাসার সুপারগণের বেতন স্কেল মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমান, আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষগণের বেতন স্কেল ইন্টারমিডিয়েট কলেজের অধ্যক্ষগণের সমান এবং ফাযিল মাদ্রাসার অধক্ষগণের বেতন স্কেল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষগণের সমান করে দেয়। এত বড় মহানুভতার পরিচয় দেওয়ার কারণে কোন ভাষায় সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলে যথার্থ হবে তা আমাদের জানা নেই। বর্তমানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেরানীগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরীর জন্য প্রায় ২০ একর জমি ক্রয় করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে গত ১৭ অক্টোবর ২০১৭ খ্রি. একনেকে ৪১৩ কোটি টাকার পিপি পাশ হয়। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোসহ যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। মাদ্রাসার উন্নয়নে এ সরকারের জন্য এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। এটি ইসলামি শিক্ষার প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গভীর অনুরাগেরই বহিঃপ্রকাশ। মাদ্রাসার প্রতি  সরকারে এ ধরনের অনেক অবদান রয়েছে। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

কিন্তু এরপরও মাদ্রাসার অনেক বৈষম্য থেকে গেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল দাখিল ও আলিম মাদরাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারি গ্রন্থাগারিকদের এমপিওভূক্ত না করা। মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিকের ন্যায় দাখিল ও আলিম মাদ্রাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিক নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর একটি পরিপত্র জারি করে। এ পরিপত্রের (ঘ) ক্রমিক নম্বরে বলা হয়-“মাধ্যমিক/উচ্চমাধ্যমিকের ন্যায় দাখিল ও আলিম মাদরসায় সহকারি গ্রন্থাগারিক পদ অন্তর্ভূক্ত করা হল”। ফলে দাখিল ও আলিম মাদরাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে লোক নিয়োগ আরম্ভ হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল  ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল আর একটি পরিপত্র জারি করে দাখিল ও আলিম মাদরাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ বন্ধ করা হয়। এ পরিপত্রে বলা হয়-“উল্লিখিত জনবল নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতন কাঠামো নির্ধারণ ও নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এ সকল পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না”। কিন্তু অদ্যাবধি সে বিষয়টির কোন সুরাহা হয়নি। প্রথম পরিপত্রের পর বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিকরা বেতন-ভাতার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনও করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এমপিওভূক্ত হতে পারেনি। এখানে তাদের চাকরি না হলে হয়তবা তারা অন্যত্র চাকরি খুঁজতেন। আশায় আশায় থেকে তাদের সে পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সন্তান-সন্তুতি নিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

দাখিল মাদরাসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এবং আলিম মাদরাসা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের সমপর্যায়ভূক্ত । কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি গ্রন্থাগারিকের প্রয়োজন আছে কিন্তু দাখিল মাদরাসায় প্রয়োজন নেই, এটি বোধগম্য নয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সাথে সংশ্লিষ্ট বইগুলো সংরক্ষণ এবং বিতরণ ও সংগ্রহের প্রয়োজন আছে কিন্তু মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে সংশ্লিষ্ট বইগুলোর ক্ষেত্রে সেধরনের প্রয়োজনীয়তা নেই! নাটক, উপন্যাস, গল্প ইত্যাকার বইগুলো খুব মূল্যবান, কিন্তু আল কুরআন ও আল হাদীছের বইগুলো কি মূল্যবান নয়? বরং মাদরাসার বইগুলোর জন্য একজন সহকারি গ্রন্থাগারিকের বেশি প্রয়োজন। কারণ মাদরাসার বইয়ের কলেবর অনেক বড়। দামও অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ-‘তারীখু মাদীনাতু দিমাশক’ নামক বইটি ৭০ খণ্ড বিশিষ্ট, দাম প্রায় ২৮ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে একটি গ্রন্থের নাম ‘সিয়ারু আলামুন নুবালা’, এটি ২৮ খণ্ডে সমাপ্ত। এর মূল্য প্রায় এগারো হাজার টাকা। ‘লিসানুল আরাব’ নামক আরবি অভিধান গ্রন্থ ২২ খণ্ড বিশিষ্ট, এর মূল্য প্রায় নয় হাজার টাকা। কাজেই মাদরাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিকের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শত প্রতিকূলতা সত্বেও এ সরকার দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এম.ডি.জি) অর্জনে সরকার সফল হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এস.ডি.জি) অর্জনেও সরকার সফল হবে ইনশায়াল্লাহ। এ সরকার জাতীকে একটি বড় ধরনের বাজেট উপহার দিয়েছে। সরকার আমাদেরকে মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, অচিরেই এ স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আমরা আশাবাদী। পদ্মাসেতুর ন্যায় বিরাট প্রকল্প নিজ অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সাহসিকতা দেখিয়ে এ সরকার আর্থিক সক্ষমতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কাজেই এ সরকারের পক্ষে দাখিল ও আলিম মাদরাসার সহকারী গ্রন্থাগারিকদের বতন-ভাতা চালু করা মোটেই দুরুহ কোন বিষয় নয়। অচিরেই নিয়োগপ্রাত সহকারি গ্রন্থাগারিকদের এমপিওভূক্ত করা হবে এবং পুনরায় পরিপত্র জারি করে দাখিল ও আলিম মাদরাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু করা হবে- শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব সরকারের নিকট এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিষয়টি সুবিবেচনায় নেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানন্ত্রীর কৃপাদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

অধ্যক্ষ ড. মোহাঃ এমরান হোসেন: চাপাইনবাবগঞ্জ সদর।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031099319458008