শিক্ষা খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম এখন সর্বজনবিদিত একটি বিষয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে নোট-গাইড ব্যবসা, কোচিং বাণিজ্য, এমপিওভুক্তিতে অনিয়ম, নিয়োগ ও বদলিতে লেনদেন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এই দুর্নীতি। অভিভাবক মহল তো বটেই, সারা দেশবাসী এই দুর্নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ, আমাদের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের যথাযথভাবে বেড়ে ওঠার সঙ্গে এসব দুর্নীতি রোধের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
আশার কথা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শিক্ষা খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তই করছে না শুধু, এসব দুর্নীতি কীভাবে রোধ করা যায় সে ব্যাপারেও এগিয়ে এসেছে। দুদকের কাজের আওতায় না থাকলেও সংস্থাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষা খাতের দুর্নীতি রোধে কিছু সুপারিশ তৈরি করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে অনুরোধ করে চিঠিও পাঠিয়েছে। দুদকের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক শিক্ষাসংক্রান্ত একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিল। সেই টিম কর্তৃক অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদন কমিশনে উত্থাপনের পর দুদক কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠিয়েছে বুধবার। দুদকের সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, অর্থের বিনিময়ে কিছু দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে পড়েছেন। এই দুর্নীতি বন্ধে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবসম্মত এবং তা বাস্তবায়ন করা হলে বিষয়টিতে সুফল পাওয়া যাবে আশা করা যায়। কোচিং সেন্টার বন্ধ করার কথাও রয়েছে সুপারিশে। এভাবে এমপিওভুক্তি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইত্যাদি বিষয়েও দুদকের তৈরি সুপারিশমালা সংস্থাটির বিচক্ষণতাই প্রকাশ করে।
আমরা মনে করি, দুদকের সুপারিশমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার গভীর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করবে। দুদকের দূরদর্শিতা ও শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলে ক্ষতি যা হওয়ার তা হবে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরই। বর্তমান সরকার শিক্ষা খাতের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ও নিচ্ছে। কিন্তু কিছু অসৎ লোকের কারণে সেসব উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দুদকের শ্রম যেন পণ্ডশ্রমে পরিণত না হয়।
সৌজন্যে: যুগান্তর