দু’বছর বন্ধ চট্টগ্রাম সরকারি কলেজর ৪ ছাত্রাবাস

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অনির্দিষ্টকালের ফাঁদে দু’বছর ধরে বন্ধ চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের চারটি ছাত্রাবাস। ফলে ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীরা। আবার অব্যবহৃত থাকার কারণে পোকামাকড় ও শ্যাওলার বিস্তার ঘটছে ছাত্রাবাসগুলোতে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে চট্টগ্রাম কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সমাবেশ করার সময় হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে। এতে দু‘গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে।

এ সংঘর্ষ পার্শ্ববর্তী সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজেও ছড়িয়ে পড়ে।
ফলে সংঘর্ষ এড়াতে চট্টগ্রাম কলেজ প্রশাসন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস, শেরে বাংলা ছাত্রাবাস, ড. আবদুস সবুর ছাত্রাবাস ও হযরত খাদিজাতুল কোবরা (র.) ছাত্রী নিবাস এবং মুহসীন কলেজ প্রশাসন তাদের হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন।

সেই থেকে হলগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। এমনকি একদিনের জন্যও হলগুলো খুলে কোনো রকম যত্ন নেওয়া হয়নি। ফলে হলের শত শত শিক্ষার্থী যেমন ছাত্রাবাস সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি হলগুলোর প্রতিটি কক্ষ শ্যাওলা ও পোকামাকড়ে ভরে গেছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে আসবাবপত্রগুলো।

কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থী হামিদ উল্লাহ জানান, তার বাড়ি কক্সবাজারে। তাই তিনি হলে থেকেই পড়ালেখা করতেন। কিন্তু হল ত্যাগের পর বাসা ভাড়া আসা-যাওয়ার খরচসহ অত্যধিক ব্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ঝড়-বৃষ্টিতে কলেজে আসা যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তাই কলেজের ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

একই কথা বলেছেন, হযরত খাদিজাতুল কোবরা (র.) ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থী নিহাতুল কিবরিয়া নিহা। তিনি বলেন, আমার বাড়ি কুমিল্লায় হওয়ায় এইচএসসিতে ভর্তির পর থেকে ছাত্রীনিবাসে থাকতাম। কিন্তু বর্তমানে বাইরে থাকায় তিনি নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সংঘর্ষ এড়াতে ছাত্রাবাসগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বন্ধ হয়নি কলেজে সংঘর্ষ। শুরুতে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলেও এখন প্রায় সংঘর্ষ বাঁধে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে। তারা বলেন, কলেজে এখন ছাত্রশিবির নেই। এরপরও ছাত্রাবাসগুলো কেন এখনো খোলা হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্ন নিয়ে কথা হয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুকুমার দত্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ মনে করছেন বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যদি একটি শিক্ষার্থীরও প্রাণ যায় তবে একটি মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে। অনেক আশা নিয়ে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের শীর্ষ স্থানীয় এই কলেজে পড়ালেখা করতে পাঠায়। আবাসিক হলে থাকতে হয় দূরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের।

সুতরাং, নিরাপত্তার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনায় যদি এদের কারো কোনো ক্ষতি হয় তবে এর দায়ভার কলেজ প্রশাসন কিভাবে নেবে। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ শতভাগ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত হলগুলো চালুর কথা ভাবতে পারছে না।

চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জেসমিন আকতার এ প্রসঙ্গে বলেন, কলেজ ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হচ্ছে এটা ঠিক। তবে কলেজ ক্যাম্পাসে নয়। ক্যাম্পাসের বাইরে। কলেজ ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে নগরীর চকবাজার থানার একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করায় সংঘর্ষ কমে এসেছে। ফলে ছাত্রাবাসগুলোর খোলার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে শ্যাওলায় হলগুলো বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। দরজা-জানালাসহ আসবাবপত্র জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। হল চালু থাকলে তো অবশ্যই ভালো থাকতো এবং অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করতেও সহজ হতো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055270195007324