নতুন বই না পাওয়ার কান্না ৪৫ হাজার শিক্ষার্থীর

রংপুর প্রতিনিধি |

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইনকিয়াদ (৭)। এবার সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। গত কয়েক দিন ধরে তার বাবা শিক্ষক এম এ মতিন সরকার সন্তানকে বলছিলেন, ‘বাবা, এবার স্কুলে গেলে তোমাকে স্যারেরা নতুন বই দেবে।’ আজ রোববার সকালে তিনি সন্তানকে বই নিতে স্কুলে পাঠান। কিন্তু তাকে বই দেওয়া হয়নি। বই না পেয়ে ছেলে স্কুল মাঠে কান্নাকাটি করছে—এমন খবর পেয়ে বাবা সেখানে যান। এ সময় প্রধান শিক্ষক নুরুছ সাবাহ তাঁকে বলেন, ‘আমরা চাহিদা অনুযায়ী, নতুন বই বরাদ্দ পাইনি। তাই সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া যায়নি।’

মতিন সরকার এতে কিছুটা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন। কান্নারত সন্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করলে শিশুটি বলতে থাকে, ‘বাবা, আমাকে নতুন বই কিনে দাও। আমি বাড়ি যাব না।’

বছরের শুরুতে এমন সমস্যায় শুধু মতিন সরকার নন, অনেক অভিভাবকই পড়েছেন। বদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যের নতুন বই তুলে দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও এই উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের ৫২ হাজার ৭০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে বই পেয়েছি সাড়ে ছয় হাজার সেট।’

এই কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, আজ বদরগঞ্জ উপজেলার ৪৫ হাজার ৫৭০ শিক্ষার্থী বিনা মূল্যের নতুন বই হাতে পায়নি। শিশুরা বই নিতে স্কুলে গিয়ে না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে। মন খারাপ করে কান্নাকাটি করেছে শিশুরা।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহম্মেদ বই সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘প্রতি বছর প্রেস থেকে সরাসরি নভেম্বরের মধ্যে উপজেলায় বই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এবার তা না করায় গত বুধবার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে কিছু নতুন বই রংপুর জেলা বাফার স্টোর থেকে এনে স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে অচিরেই নতুন বই পাওয়া যাবে।’

আফতাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুছ সাবাহ অভিযোগ করেন, ‘আজকে নতুন বই না পেয়ে আমাকে অনেক অভিভাবক লাঞ্ছিত করেছেন। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১২০ জন শিক্ষার্থীর চাহিদাপত্র উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে দিয়েছি। কিন্তু বই পেয়েছি প্রথম শ্রেণির দুই সেট আর দ্বিতীয় শ্রেণির ১০ সেট। এই বই ১২ জন শিক্ষার্থীকে দিয়েছি।’

উপজেলার খাগড়াবন্দ শাহপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ১৯৮ জন। সেখানে বই সরবরাহ করা হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৩৫ সেট। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই আজকে পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত আলী শাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বই না পেয়ে কান্নাকাটি করে খালি হাতে বাড়িতে ফিরে গিয়ে বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে।’

রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান আজ সন্ধ্যায় বলেন, ‘বইয়ের কোনো সংকট নেই। সব বই একদিনে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। এতে চিন্তার কারণ নেই। দুই-একদিনের মধ্যে উপজেলার সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047059059143066