পরিস্থিতির উন্নতি নেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজেরপরিস্থিতির উন্নতি নেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নীতিমালা-২০১১ লঙ্ঘনের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়টি মেডিকেল কলেজের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। সম্প্রতি কলেজগুলো স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে। নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তির তোড়জোড় করলেও এসব কলেজে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। নতুন করে পরিদর্শনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকা নয়টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে কলেজগুলো নতুন করে পরিদর্শন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গঠিত বর্ধিত আকারের পরিদর্শন কমিটি এরই মধ্যে পাঁচটি কলেজ পরিদর্শন করেছে। বাকি কলেজগুলো পরিদর্শনের পর শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে।
জানা গেছে, নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বছর চারটি ও চলতি বছর পাঁচটি মেডিকেল কলেজের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। মেডিকেল কলেজগুলো হলো— ঢাকার আদ্-দ্বীন বসুন্ধরা মেডিকেল কলেজ, আশিয়ান মেডিকেল কলেজ, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ, কেয়ার মেডিকেল কলেজ, আইচি মেডিকেল কলেজ, সফেনা উইমেন্স ডেন্টাল কলেজ ও গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি কলেজগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নতুন করে পরিদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ, রাজধানীর সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও আইচি মেডিকেল কলেজে পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিদর্শন কমিটির এক সদস্য জানান, নতুন ভর্তি মৌসুম সামনে রেখে স্থগিতাদেশ থেকে বেরিয়ে আসার তোড়জোড় করলেও সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজগুলোয় পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যায়নি। পরিদর্শনকৃত পাঁচটি মেডিকেল কলেজে সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক নয়।
কমিটির আরেক সদস্য বলেন, কমিটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। নীতিমালা অনুযায়ী মেডিকেল কলেজ তৈরির আগে সেখানে হাসপাতাল থাকতে হবে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় সেই ধরনের ব্যবস্থা নেই।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ ডিগ্রি অর্জন আর মেডিকেল শিক্ষায় ডিগ্রি অর্জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। এটি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিদর্শনে মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালার সঙ্গে কলেজগুলোর বিরাজমান পরিস্থিতির কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। শিগগিরই বাকি মেডিকেল কলেজগুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। শুধু ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত থাকা কলেজগুলোই নয়, অন্যান্য মেডিকেল কলেজও পরিদর্শন করা প্রয়োজন বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।
জানা গেছে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াই বেশকিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কলেজগুলোয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনুপাতের ক্ষেত্রেও নীতিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিয়েও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের আওতায় থাকা নর্দার্ন মেডিকেল কলেজ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সরকারি কোটা অনুযায়ী ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে ৩৭৫টি শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থাকার কথা থাকলেও তা নেই। এর আগে অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কোনো রোগী দেখা পাওয়া যায়নি। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানানোর পর দ্বিতীয় দফা পরিদর্শনেও সেখানে কোনো উন্নতি দেখা যায়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। বিধি অনুযায়ী পৃথক ক্যাম্পাস থাকার কথা থাকলেও নর্দার্ন মেডিকেল কলেজে তা নেই।
মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালার ২.৫ ধারা অনুযায়ী, ৫০ আসনের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কমপক্ষে দুই বছর আগে থেকে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ ন্যূনতম ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল চালু থাকতে হবে এবং ওই হাসপাতালের অন্তত ৭০ শতাংশ বেডে রোগী থাকতে হবে। পরবর্তীতে চিকিৎসা শিক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তর করার সুবিধা নিশ্চিত করতেই মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল রাখার শর্ত নীতিমালায় জুড়ে দেয়া হয়। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে অনেকগুলোই এ শর্ত পূরণ করেনি।