পরীক্ষাকেন্দ্র নিয়ে ছাত্রীদের নানা বিড়ম্বনা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের একমাত্র নারী মহাবিদ্যালয় আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ। এখান থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করা ছাত্রী মাহমুদা জাহানের স্বপ্ন ছিল, এসএসসির মতো এইচএসসিতেও তিনি জিপিও-৫ পেয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করবেন।

কিন্তু তাঁর এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এইচএসসিতে বাংলায় ১৫৬, ব্যবস্থাপনায় ১৫৮ ও হিসাব বিজ্ঞানে ১৫৮ নম্বর পেয়েও শেষ পর্যন্ত জিপিএ ৪.৫ পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন।
কলেজ ক্যাম্পাসে এ প্রতিবেদকের কাছে তাঁর আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ার জন্য দূরবর্তী পরীক্ষাকেন্দ্রকে দায়ী করেন মাহমুদা।

তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের সাউথ সন্দ্বীপ কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমাদের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ’

মাহমুদা জানান, তাঁর বান্ধবী তানজিদাও তাঁর মতো কাছাকাছি নম্বর পেয়েও শেষ পর্যন্ত জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মাহমুদা বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরীক্ষার দিন প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া উপেক্ষা করে প্রায় ২০ মিনিট বিলম্বে আমরা দুই বান্ধবী পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছি। ’

কলেজ ক্যাম্পাসে কথা হয় তাঁদের সহপাঠী আরমিন ও তাহসিনের সঙ্গে। তাঁরা দুজন একসঙ্গে টেক্সিযোগে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষার দিন পথিমধ্যে টেক্সির চাকা পাংচার হয়ে যাওয়ায় বিকল্প উপায়ে প্রায় ২৫ মিনিট বিলম্বে তাঁরা কেন্দ্রে পৌঁছেন।

সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেলেও দুজনই তথ্যপ্রযুক্তিতে ফেল করায় অকৃতকার্য হন পরীক্ষায়।
তাঁরা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি কলেজে একটি কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও এত দূরে গিয়ে আর কতবার আমাদের কলেজের ছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে হবে? শুধু দূরবর্তী কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গিয়ে গত এক যুগে মাহমুদা, তানজিনা, আরমিন, তাহসিনের মতো কলেজের অনেক ছাত্রী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ’ মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার পথে নেমে এসেছে কালো ছায়া-এ অভিযোগ কলেজের ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকমহলের।

জানা গেছে, সন্দ্বীপের একমাত্র মহিলা মহাবিদ্যালয় আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ ২০০৩ সাল থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত ১৫টি ব্যাচ এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করে। হতদরিদ্র, ঝরেপড়া ও অপেক্ষাকৃত কম জিপিএপ্রাপ্ত ছাত্রীরা সাধারণত এ কলেজে ভর্তি হয়। কলেজ থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে সরকারি হাজী এ বি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র থাকলেও অজ্ঞাত কারণে গত এক যুগ ধরে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সাউথ সন্দ্বীপ কলেজে গিয়ে কাসেম হায়দার কলেজের ছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগক্ষেত্রে সন্দ্বীপে কোনো বাস বা টেম্পু সার্ভিস সুবিধা নেই। দ্বীপের রাস্তাঘাট এখনো অনুন্নত থাকায় পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বর্ষাকালে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তাই পরীক্ষার্থী ছাত্রীদের প্রতিদিন ৬০০/৭০০ টাকায় রিকশা কিংবা ১০০০/১২০০ টাকায় টেক্সি রিজার্ভ করতে হয়। যা একজন গরিব অভিভাবকের জন্য দুঃসাধ্য বিষয়।

অভিভাবকদের মতে, পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পথিমধ্যে নানা সমস্যা, পরীক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়, আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিকটবর্তী কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও দূরের কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্পূর্ণ অমানবিক। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার ছাত্রীরা নিকটবর্তী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার দাবি করে আসছে।

সন্দ্বীপে নারীদের উচ্চশিক্ষার সুবিধার্থে একমাত্র মহিলা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষাকেন্দ্র নিকটস্থ সরকারি হাজী এ বি কলেজে স্থাপনের জোর দাবি জানিয়েছেন এখানকার ছাত্রী, অভিভাবক ও সচেতনমহল।

কলেজ অধ্যক্ষ মো. হানিফ বলেন, ‘বিগত ৩/৪ বছর ধরে বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য আবেদন-তদবির করেও কোনো ফল পাইনি। ফলে দূরবর্তী কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গিয়ে দিন দিন ছাত্রীদের দুঃখ-দুর্দশা বেড়েই চলছে। ’

কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলী খসরু বলেন, ‘সরকারের নারীশিক্ষা সমপ্রসারণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে এলাকার নারী শিক্ষার বিস্তার

ঘটাতে এ কলেজের ছাত্রীদের নিকটবর্তী কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057888031005859