পরীক্ষা দিচ্ছে ৩৮ বালিকাবধূ!

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহীর বাগমারার ৩৮ ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে স্বামীর বাড়ি গেলেও এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা স্বামীর বাড়ি থেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে নিয়মিত পরীক্ষা দিচ্ছে। পারিবারিক কারণে ভুল হলেও এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় বাল্যবিবাহের শিকার ওই ছাত্রীরা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯৯টি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৫ হাজার ১ জন পরীক্ষার্থী চারটি পরীক্ষাকেন্দ্রে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ আবদুল মুমীত বলেন, ‘বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে এসে পরীক্ষা দিচ্ছে, এ রকম ঘটনা শুনেছি। এটা ভালো দিক। তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।’

উপজেলার ওই চারটি পরীক্ষাকেন্দ্রে এক সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালানো হয়। এ সময় শিক্ষক, বাল্যবিবাহের শিকার পরীক্ষার্থী, তাদের স্বামী, শ্বশুর ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে অন্তত ৩৮ জনের স্বামীর বাড়ি থেকে পরীক্ষা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তাদের কারও বিয়ে হয়েছে ভুয়া জন্মনিবন্ধনপত্র দেখিয়ে। আবার কারও কারও বিয়ে নিবন্ধন হয়নি। তবে যাঁরা এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

বাল্যবিবাহের শিকার অন্তত ১৬ জন পরীক্ষার্থী জানায়, পরিবারের সদস্যরা তাদের বিয়ে দিয়েছেন। তাদের আপত্তি জানানোর সুযোগ ছিল না। তবে লেখাপড়ার বিষয়ে কোনো পরিবার আপত্তি জানায়নি।

উপজেলার একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী স্বামীর বাড়ি থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বিয়ের পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনেছে।

আরেকটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকেও দুজন ছাত্রী বিয়ের পর পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি ভেবেছিলেন, আর তারা লেখাপড়া করবে না। তবে পরীক্ষার দুই দিন আগে তারা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে স্বামীর বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।

১২ নভেম্বর উপজেলার ভবানীগঞ্জ পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর পুত্রবধূ পরীক্ষা দিচ্ছে। লেখাপড়ার বিষয়ে ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর আগ্রহ রয়েছে। তিনি সহযোগিতা করছেন। তবে বয়স কম থাকায় বিয়ে নিবন্ধন করা হয়নি।

আজাদুল ইসলাম (ছদ্মনাম) নামের এক অভিভাবক বলেন, যৌতুক ছাড়াই কর্মঠ পাত্র পাওয়ায় মেয়েকে এলাকাতেই বিয়ে দিয়েছেন। তবে শর্ত ছিল মেয়ে কমপক্ষে এসএসসি পাস করবে, এ পর্যন্ত লেখাপড়ায় বাধা দেওয়া যাবে না। সে শর্তমতে, মেয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে এবার পরীক্ষা দিচ্ছে।

রোকসানা খাতুন (ছদ্মনাম) ও বিলকিস আক্তার (ছদ্মনাম) নামের দুই পরীক্ষার্থী জানায়, লেখাপড়ায় আগ্রহ থাকায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আপত্তি জানাননি। তাঁরাই এখন পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে এসে পরীক্ষা দিতে সহযোগিতা করছেন।

রিনা খাতুন (ছদ্মনাম) নামের আরেক ছাত্রীর ভাষ্য, ‘বিয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে, এসএসসি পাস করবই, বাধা দিলে ঘর ভাঙব, তা-ও লেখাপড়া বাদ দেব না।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাল্যবিবাহের কারণে কতজন পরীক্ষা দিতে পারেনি এবং বাল্যবিবাহের পর কতজন পরীক্ষা দিচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই। যদি কোনো ছাত্রী বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যায়, এটা ভালো। তাকে সহযোগিতা করা হবে। আর বাল্যবিবাহের জন্য তো ছাত্রী দায়ী নয়। তার পরিবার দায়ী।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007349967956543