পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০১৮ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপা, বাঁধাই ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে কয়েকটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শনও করছেন কিন্তু তা শুধুই লোক দেখানো।

জানা যায়, পুরনো অর্থাৎ ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের বইয়ে শুধু স্টিকার দিয়ে লেখা হয়েছে ২০১৮। সেই বইগুলোই পাঠানো হচ্ছে নতুন বই হিসেবে। আবার কোথাও যে পরিমাণ বই দেওয়ার তথ্য চালানে দেওয়া হয়েছে গুনে দেখা গেছ সংখ্যায় কম। এনসিটিবির ছাড়পত্র ছাড়াও বই উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে। বাঁধাইয়েও আছে সমস্যা।  প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহে শেষ মুহূর্তে এ রকম আরও কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের কারণে দুটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ছাপার আদেশ বাতিল করা হয়েছে। তবে, বরাবরেই মতো কয়েকমাস পরে যখন বই নিয়ে আলোচনা শেষ হবে তখন এদেরকে গোপনে ক্ষমা করে দেয়া হবে।

জানা যায়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলেরর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বইয়ের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানালে উল্টো মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে বদলির ভয় দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঠ্যবই ছাপানো দেখভাল করা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলির দায়িত্বে রয়েছেন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারাই পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিব আবার তারাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপ-পরিচালক।

 জানা যায়, গত রোববার এনসিটিবির এক তদারক সভায় সাতটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠা ঠিকমতো বই দিতে পারবে কি না এবং ছাপা বইয়ের মান যথাযথ হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ঝুঁকি দেখছে এনসিটিবি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এনজেল প্রিন্টার্স, পিএ প্রিস্টার্স, ফাইভ স্টার প্রিন্টার্স, ময়না প্রিন্টার্স, সাহারা প্রিন্টার্স, জাতীয় মুদ্রণ ও ক্যাপিটাল প্রিন্টার্স। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবিড় তাদারক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এবার শুরুতেই ‘জোট বেঁধে’ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ঠেকিয়ে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক কম দর দিয়ে ৩২টি মূদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক স্তরের কাজ নিয়েছে। এ ছাড়া পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান দেরিতে নিয়োগসহ আরও কয়েকটি কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এখন শেষ মুহূর্তে এসে কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেন, বান্ডিলে কিছু বই কম দেওয়ার তথ্য তারাও পেয়েছেন। অনিয়ম করলে বিল আটকে দেওয়া হবে।

আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০১৮) জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই ছাপা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একধিক কর্মকর্তা বলেন, শেষ মুহূর্তে মুদ্রাকরদের কাছ থেকে ঠিক সময়ে বই আদায় করাই তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সুযোগে কিছুসংখ্যক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম লিখিতভাবে এনসিটিবিকে জানিয়েছেন, মডেল প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামের একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান তাদের এলাকায় যেসব বই দিয়েছে তার মধ্যে বেশ কিছু ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে স্টিকার দিয়ে ২০১৮ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গত ২৮ নভেম্বর দেওয়া বইয়ের দুটির বান্ডিলে পুস্তকসংখ্যা ৭০ এর স্থলে ৫০ পাওয়া যায়। আরবি দ্বিতীয় পত্রের মোট ৪০টি বান্ডিলের মধ্যে ১৪টি বান্ডিলে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে স্টিকার দিয়ে ২০১৮ সাল করা হছেছে। অন্যান্য বইয়ের ক্ষেত্রেও এমন ঘাপলা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করে এনসিটিবি। অবশ্য ওই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক সাহেব আলী বলেন, ছাপার ভুলের কারণে ৭০০ বইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু বইগুলো এ বছরের।

সরকার প্রিন্টিং আন্ড পাবলিশিং ও এপেক্স প্রিন্টিং অ্যান্ড কালারের দেওয়া কয়েকটি বিষয়ের বইয়ের বান্ডিলেও কম বই দেওয়ার অভিযোগ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। জনতে চাইলে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সমস্যা হওয়ার আশঙ্কায় বিষয়টি তিনি এনসিটিবিকে জানিয়েছেন।

এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পিএ প্রিন্টার্স নামের একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান ২ লাখ বই এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়াই মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছে, যা তারা করতে পারে না। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের সব বই ছাপার কাজ বাতিল করা হছেছে। আর সময়মতো চুক্তি না করে শর্তভঙ্গ করায় আল মদিনা নামে আরেকটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই লাখ কপি ছাপার কাজ বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়ও সিলেটের হবিগঞ্জের বাহুবলে মাধ্যমিক স্তরের এক ট্রাক সরকারি বিক্রি করার সময় শিক্ষা অফিসের কর্মচারীসহ ছয় জনকে আটকের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাহুবল মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার বাদী হয়ে সাত জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার ছয় আসামি গ্রেফতার রয়েছে এবং একজন পলাতক।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাতে সরকারি নতুন বই ট্রাক ভর্তি করে পাচারের সময় বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক মনিরুজ্জামান (৪০), নাইট গার্ড আব্দুল হান্নান (৫০), টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার চৌবাড়িয়া গ্রামের হারিছ মিয়ার ছেলে আইয়ূব আলী (৪২), মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত হাসমত আলীর ছেলে ট্রাক চালক মফিদুল ইসলাম (৪৫), ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকার মৃত জলিল হোসেনের ছেলে ট্রাক হেলপার রমজান হোসেন (২২) ও চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা উপজেলার বেগমপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে ট্রাক হেলপার মোবারক হোসেনকে (১৭) আটক করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060000419616699