বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পরিচালক পদে ২০০৫ সালে যোগদান করেন বিবেকানন্দ বিশ্বাস ও সেলিমা বেগম। এরপর ৯ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতি পাননি এ দুই কর্মকর্তা। যদিও পরিচালক হিসেবে কোনো কর্মকর্তা তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করলেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদের যোগ্য হয়ে থাকেন।
শুধু বিবেকানন্দ ও সেলিমা বেগম নন, দীর্ঘ সময় ধরে পদোন্নতি পাচ্ছেন না আরো ৯ পরিচালক। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হওয়ার যোগ্য এ ১১ পরিচালককে পদোন্নতি না দিয়ে বাইরে থেকে প্রেষণে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেয়া হয়েছে কমিশনে। পরিচালকের মতো উপপরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ আরো বেশকিছু পদের কর্মকর্তারাও দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি পাচ্ছেন না।
২০১১ সালে উপপরিচালক পদে যোগদান করেন পান্নু চন্দ্র দে। দুই বছর আগে পরিচালক পদের যোগ্যতা অর্জন করলেও এখনো পদোন্নতি পাননি তিনি। তার মতো আরো ৯ জন উপপরিচালক এখন পরিচালক পদের যোগ্য হয়েও আগের পদে রয়ে গেছেন। অথচ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতো পরিচালক পদেও বাইরে থেকে তিনজনকে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে পিএসসিতে।
জানা গেছে, পিএসসির বিভিন্ন পদে ৫৫ জন কর্মকতা পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। এর মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে ১১ জন, সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট পদে একজন, পরিচালক পদে ১০ জন, উপপরিচালক পদে দুজন, সহকারী পরিচালক পদে ১৪ জন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে দুজন এবং প্রশাসনিক পদে ১৫ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। এছাড়া ছয়জন কর্মচারী পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকলেও তারা পদোন্নতি পাননি। সব মিলিয়ে ৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি আটকে আছে। পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, তাদের পদোন্নতি তো দেয়া হচ্ছেই না, অনেক সময় পদোন্নতির জন্য আবেদন করলে বিভাগীয় পর্যায়ে বদলি করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সেক্রেটারিয়েট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পিএসসির পরিচালক মো. ওয়াজেদ আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না থাকায় কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। নিয়মিতভাবে দীর্ঘদিন পদোন্নতি না হওয়ার কারণে একটি জটও তৈরি হয়েছে। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থেকে আগেই অবসরে চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে আমরা আশা ছাড়িনি।
পরিচালক পদ থেকেই মেয়াদের আগেই অবসরে চলে গেছেন এমন একজন মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ২০১৬ সালে তার অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তিন বছর আগেই অবসর নিয়েছেন। এখন রাজশাহীর গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন। চিন্তা করছেন কৃষিভিত্তিক ব্যবসায়ের।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএসসির কর্মকর্তাদের পদোন্নতি সংকট দূর করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের কাজে গতি আনতে পিএসসিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং সব শূন্য পদে জনবল নিয়োগ ত্বরান্বিত করতে হবে। নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে একাধিক উইং সৃষ্টি করে শিক্ষক ও চিকিত্সক নিয়োগের বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে হবে’। কিন্তু ২০১৬ সালে পাঠানো এ চিঠির নির্দেশনা বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। আর এ কারণেই পিএসসিতে জট আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পিএসসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খান ও মো. শাহজাহান আলী মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কমিশনের সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। আর পিএসসি সচিব আক্তারী মমতাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে এটি বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। দ্রুত তা বাস্তবায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।