শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে ফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে আমরণ অনশনে থাকা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের। সোমবার (১৫ই জানুয়ারি) দুপুরে পরিবহন পুলে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । এ বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী অগ্রগতি জানাবেন বলে শিক্ষকদের জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠকে উপস্থিত মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির একজন নেতা দৈনিকশিক্ষাকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবির বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। এ বৈঠকেও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ তাদের দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
এর আগে গতকাল রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অনশনরত শিক্ষকদের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অনশন ভেঙ্গে বাড়ী ফিরে যেতে অনুরোধ করলে নেতৃবৃন্দ তা প্রত্যাখ্যান করেন। সভায় আন্দোলনরত বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকগণের দাবি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয় প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে বলে নেতাদের জানান শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। বৈঠককালে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব মো. আলমগীর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথমে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পরিবহন পুল ভবনে মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর দুপুর দেড়টার দিকে মাদ্রাসা শিক্ষকদের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকে বসেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এসময় শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি কোনো আশ্বাস দেননি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ বিষয়ে চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাবেন। তাই শিক্ষকেরা যেন অনশন ভেঙে বাড়িতে ফিরে যান সেই অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু এ বিষয়ে শিক্ষকেরা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
প্রথম দফা বৈঠকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী জাতীয়করণের দাবি মানার আশ্বাস দেন আমরণ অনশনরত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক নেতাদের। শিক্ষকদের দাবিটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে সরকার। দু’একদিনের মধ্যে অনশন ভাঙ্গানোর বিষয় অগ্রগতি জানানো যাবে বলে শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছেন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছেন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। পরে ৯ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
আজ সোমবার (১৫ই জানুয়ারি) ৭ম দিনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের উপস্থিতি আরও বেড়েছে। অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে রোববার দুপুর পর্যন্ত ১৬৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। কেউ কেউ স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন। অসুস্থদের অধিকাংশই অতিরিক্ত শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।
জানা যায়, মাদ্রাসা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া ১০ হাজারের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে। এতে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। মাত্র এক হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা দুই হাজার ৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরি করতে করতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। জাতীয়করণ ছাড়া আমাদের আর ভিন্ন কোনো পথ খোলা নেই। সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছে। আমরাও তো প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম অংশ। তাহলে আমাদের কেন বাকি রাখা হবে? আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি ঠিকমতো বোঝালে তিনি নিরাশ করবেন না। তাই আমরা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছি।
সোমবার (১৫ই জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরন, মাওলানা মো: শাহজাহান, তাজুল ইসলাম ফরাজী,যুগ্ম মহাসচিব আবু মুসা ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম, আজিজুল হক, মিজানুর রহমান, আব্দুল হামিদ, ময়েজ উদ্দিন,ইমদাদুল হক বাদল,তৈয়বুর রহমান, সুমি খাতুন,ফরিদা ইয়াসমিন,ফেন্সী খাতুন,নাসরিন বেগম,রুবিনা খাতুন,সুফিয়া বেগম,শাকিলা খাতুন প্রমুখ।