প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কোচিং বাণিজ্য : দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কোচিং, নিয়োগ বাণিজ্য এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিক্ষাসংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম ৩৯টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে প্রশ্নফাঁস বন্ধে সুপারিশ করা হয় ৮টি। দুর্নীতির উৎস, কারণ এবং তা প্রতিরোধে সুপারিশমালাসহ তারা প্রতিবেদন দাখিল করেছে কমিশনে। আর এই প্রতিবেদন গত বুধবার অনুমোদন দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর পাঠানো হয়েছে। এর আগে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন সময় কড়া পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। তবে আশার বিষয় হলো- দুদক এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তৎপর হয়েছে। অনুসন্ধান চালিয়ে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরের স্বনামধন্য আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে। আমরা দুদকের এই তৎপরতাকে স্বাগত জানাই। আশা করছি মন্ত্রণালয় চিহ্নিতদের ব্যাপারে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

জানা যায়, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন শিক্ষকসহ রাজধানীর আটটি স্কুলের কোচিংবাজ ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭২ জন শিক্ষক এবং সরকারি চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত বলে দুদক প্রমাণ পেয়েছে। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থেকে ওই শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়েছেন এবং অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করে আসছেন। কোচিং এবং নোট-গাইড বাণিজ্য বন্ধে ৮টি সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদান না করা, পাঠ্য পুস্তক, কোচিং মালিক এবং কতিপয় শিক্ষকের অবৈধভাবে স্বল্প সময়ে সম্পদ অর্জনের তীব্র আকাক্সক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রমের মনিটরিংয়ের অভাব এবং অভিভাবকদের অসচেতনতা ইত্যাদি দুর্নীতির মূল উৎস।

এটা বন্ধ করতে না পারলে সামনে আরো ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে। তাদের বিরুদ্ধে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারকে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে বলেছে দুদক। এ ছাড়া কোচিং বাণিজ্য ঠেকাতে ওই শিক্ষকদের এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে, এক শাখা থেকে অন্য শাখায়, এক শিফট থেকে অন্য শিফটে নির্দিষ্ট সময় পর পর বদলি করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে দুদক। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা বোর্ডের সম্ভাব্য দুর্নীতির উৎস উল্লেখ করে দুদক বলছে, শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ সরকারি প্রেস (বিজি প্রেস), ট্রেজারি এবং পরীক্ষাকেন্দ্র এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন কোচিং সেন্টার, প্রতারক শিক্ষক ও বিভিন্ন অপরাধী চক্র। এদের হাত ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে।

সারা দেশেই কোচিংয়ের নামে ভয়াবহ বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িত এই কোচিং ব্যবসায়। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এমনকি প্রশ্নফাঁসের মতো ভয়াবহ দুর্নীতির সঙ্গেও কোচিং সেন্টার এবং কোচিং সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির শিক্ষক জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে অতীতে। আমরা চাই আট প্রতিষ্ঠানের যে ৯৭ জন শিক্ষকের নাম দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক, যে দৃষ্টান্ত অন্যদেরও উপযুক্ত বার্তা দেবে। শুধু মহানগরীতেই নয়, সারা দেশেই চলছে এক শ্রেণির শিক্ষকদের অনৈতিক তৎপরতা। দুদক প্রশ্নপত্র ফাঁস ও কোচিং বাণিজ্য প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিয়ে এগোতে পারেন। কোচিং বাণিজ্যে ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিশাপ থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের রেহাই পেতে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005079984664917