ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। খ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে শুক্রবার সকালে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পাশাপাশি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রযুক্তির অপব্যবহার ঘটিয়ে উত্তর সরবরাহের অভিযোগও উঠেছে। এদিকে পরীক্ষায় জালিয়াতির প্রস্তুতি নেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অতীতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ২০১০ সালে শিক্ষা ওগবেষণা ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলও করা হয়েছিল। দেশে প্রশ্ন ফাঁসের ভয়ঙ্কর এক অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের রোগ বহু পুরনো। দেশে এমন এক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে যে, সব স্তরের পরীক্ষাতেই একটি চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে। মূলত পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে অন্যায়ভাবে টাকা কামানোই এ চক্রের উদ্দেশ্যে।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, একশ্রেণীর শিক্ষার্থী বা অভিভাবক যে কোন মূল্যে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সংগ্রহ করে। লাখ লাখ টাকার প্রশ্ন বাণিজ্যই সব স্তরের প্রশ্ন ফাঁসের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। প্রশ্ন ফাঁসের ফলে একটি চক্র অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করছে বা প্রশ্ন কেনা বা পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিনাশ্রমেই বেশি নম্বর পাওয়ার ফন্দি-ফিকির করছে। তবে সমস্যা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যেসব শিক্ষার্থী কোন প্রশ্ন সংগ্রহ করে না তারা একটি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যায়। তাদের মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। প্রশ্ন ফাঁসের গভীর ও ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে, পদ্ধতিগত শিক্ষা ও পরীক্ষার সমাধান শিক্ষার্থীদের ভীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়া।
তারা যদি জানে যে, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন তাদের হাতে পৌঁছে যাবেই তাহলে তারা সারা বছর কেন বই পড়বে, কেন কিছু শিখতে চাইবে! সুষ্ঠু ও সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে সব স্তরেই প্রশ্ন ফাঁস কঠোরভাবে রোধ করা জরুরি। সমস্যা হচ্ছে, কোন কর্তৃপক্ষই প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি স্বীকারই করেন না। পাবলিক পরীক্ষার সময় কেউ প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ স্বীকার করেন না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও যেমন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ স্বীকার করেনি। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষগুলোর অস্বীকারের এ অপসংস্কৃতিই মূলত প্রশ্ন ফাঁসকে অন্যায় উৎসাহ দিচ্ছে। অসাধু চক্র ও এক শ্রেণীর শিক্ষার্থী-অভিভাবকের কারণে প্রশ্ন ফাঁস বহু আগেই বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। এখন কর্তৃপক্ষগুলোর অস্বীকারের অপসংস্কৃতির কারণে প্রশ্ন ফাঁস করার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে চলেছে। এটা এখন সবারই জানা যে, বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার এর সঙ্গে জড়িত। প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপা, বিতরণ প্রভৃতি স্তরে যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে তাদের সবার বিরুদ্ধেই কখনো না কখনো প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বা ব্যর্থতা ঢাকতেই কর্তৃপক্ষগুলো প্রশ্ন ফাঁসের দায় আড়াল করে।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। আমরা বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগকে আমলে নেয়া। অভিযোগ খতিয়ে দেখে সত্যতা মিললে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণ করতে হবে। আমরা চাই, যোগ্যতম শিক্ষার্থীরই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগ পাক। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের নজির রয়েছে। কাজেই এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না বরং কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। শিক্ষার্থীর যথার্থ মূল্যায়ন এবং প্রশ্ন ফাঁসের পুনরাবৃত্তি রোধের স্বার্থেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়া জরুরি।