প্রশ্ন ফাঁসে ঢাবির কর্মকর্তা ও কোচিং সেন্টার জড়িত

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটসহ ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কোচিং সেন্টারও জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই মধ্যে মনির নামে ঢাবির দ্বিতীয় শ্রেণির এক কর্মকর্তা এবং ‘ওমেকা’ নামে একটি কোচিং সেন্টারকে নজরদারিতে নিয়েছেন সিআইডির তদন্তকারীরা।

জালিয়াতচক্রের সদস্যরা মোবাইল ফোনে ভর্তি পরীক্ষার চারটি সেটের প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে পাঠায়। বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর তৈরি করা হয়। প্রশ্নের উত্তরপত্র পেতে আগ্রহী অনেকে এই ডিভাইস ব্যবহার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজন ছাড়াও অন্তত এক ডজন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে এসব তথ্য। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানান, তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছে সিআইডি। এই জালিয়াতচক্রে জড়িত সন্দেহে কমপক্ষে ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্র।

গত শুক্রবার ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুন এবং শহিদুল্লাহ হল থেকে মহিউদ্দিন রানাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। মামুন ঢাবির ফলিত রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং রানা পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন।

তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষাকেন্দ্র ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে অসদুপায় অবলম্বনকারী ইশরাক আহমেদ রাফীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে ১২ জনকে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ভ্রাম্যমান আদালত। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মহিউদ্দিন রানা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক, যাঁকে এরই মধ্যে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এদিকে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে শনিবার আদালতের নির্দেশে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিআইডির সংগঠিত অপরাধ বিভাগ (অর্গানাইজড ক্রাইম)। গতকাল রবিবার ছিল তাদের রিমান্ডের প্রথম দিন।

জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সংগঠিত অপরাধ) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে অনেকেরই কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। অনেকে ডিভাইস নিয়েছে। কেউ কেউ ডিভাইসটি নিয়েও ফেরত দিয়েছে। যাদের মাধ্যমে জালিয়াতির ডিভাইসটি কেনা হয়েছে তাদেরও খুঁজছি আমরা। দেখা হচ্ছে কারা লাভবান, কাদের পরিকল্পনা—এসব। ’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ এবং কোচিং সেন্টারের নামও এসেছে। তবে তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়া কতজন জড়িত তা এখনই বলা যাবে না। আমরা আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারি। ’

সিআইডি সূত্র জানায়, চক্রটি আন্তর্জাতিক অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ডিভাইসটি (মাস্টার কার্ডসদৃশ) কেনে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজন শিক্ষার্থী ডিভাইস সরবরাহ করার কথা স্বীকার করেছে। আরেকটি চক্র ডিভাইসের সাহায্যে পরীক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে উত্তর বলে দিত। চক্রের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত। তারা শিক্ষার্থীদের ওই ডিভাইসে সংযুক্ত করে ‘১-ক, ২-খ’—এভাবে ক্রম অনুসারে উত্তর বলত। তারা চারটি সেটের প্রশ্নই বলত। ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নেওয়া নিষিদ্ধ হলেও সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাঁদের একটি চক্র স্মার্ট ফোন দিয়ে প্রশ্নের ছবি তুলে পাঠায়। এ জন্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পায় তারা। এভাবে প্রশ্ন প্রকাশে জড়িত বলে মনির নামে এক দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে নজরদারিতে রেখেছে সিআইডি। সিআইডি তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তিনটি ধাপে পরীক্ষায় জালিয়াতি হচ্ছিল। একটি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো থেকে ভর্তীচ্ছু পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে ও তাদের মধ্যে ডিভাইসগুলো পৌঁছে দেয়। আরেকটি গ্রুপ পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে পাঠায়। অন্য গ্রুপ প্রশ্নের সমাধান করে।

সূত্রমতে, ধরা পড়া এবং এর সঙ্গে জড়িতরা গত তিন বছর ধরে ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরীক্ষার্থীদের জালিয়াতিতে সহায়তা করছে। এর বিপরীতে তারা দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। চক্রটি শিক্ষার্থীদের আসল সার্টিফিকেটের কপি জামানত হিসেবে জমা রেখে ডিভাইসগুলো সরবরাহ করে। পরীক্ষা শেষে ডিভাইস ফেরত দিয়ে সার্টিফিকেট ফেরত নেয় শিক্ষার্থীরা। ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তীচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী উত্তর পাওয়ার ডিভাইস নিয়েছিল। তবে অনেকে আগের দিন ধরা পড়ার ভয়ে এটি ফেরতও দিয়েছে। উত্তর তৈরি স্থান খুঁজতে গিয়ে সিআইডি রাজধানীর ফার্মগেটের ওমেকা কোচিং সেন্টারের নাম জেনেছে। ওই কোচিং সেন্টারে বসে বিশেষ ডিভাইসটি ব্যবহার করে উত্তর তৈরি করা হতো এবং পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো হতো। ওমেকার কে বা কারা ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখছে সিআইডির তদন্তকারীরা।

এদিকে ঢাবির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যদি কেউ ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেব। ’

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062680244445801