প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ ১৯ নভেম্বর । চলবে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত। ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫ জন খুদে পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নেয়ার লক্ষ্যে নিবন্ধন করেছে।
সকাল ১১টা থেকে এ পরীক্ষা চলবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সময় ২০ মিনিট অতিরিক্ত রাখা হয়েছে।
শনিবার (১৮ই নভেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
এবারের ৬টি বিষয়ে প্রতিটিতে ১০০ করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান আজ রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।
দেশের সর্ববৃহৎ এ পরীক্ষায় এবছর ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। প্রাথমিক শিক্ষায় ২৮ লাখ ৪ হাজার ৫০৯ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৫ জন ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৪ হাজার ৫২৪ জন।
এদিকে ইবতেদায়ী শিক্ষায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৬৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। যার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৫২ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১৪ জন।
প্রাথমিক শিক্ষায় ২ হাজার ৯৫৩ জন এবং ইবতেদায়ী শিক্ষায় ৩৭৯ জনসহ মোট ৩ হাজার ৩৩২ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ৭ হাজার ২৭৯টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ৭ হাজার ২৬৭টি এবং দেশের বাইরে রয়েছে ১২টি কেন্দ্র।
এই পরীক্ষা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করার জন্য ইতিমধ্যে যাবতীয় কর্মকান্ড শেষ করা হয়েছে। দুর্গম এলাকায় ২০৪টি কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে।
প্রতি বছরের মতো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় পরীক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য ভিজিলেন্স টীম গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি শেষে উপজেলা বা পৌরসভা বা থানা পযায়ে সবার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নুরুল ইসলাম নাহিদ যখন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উভয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তখন হঠাৎ করেই জাতীয়ভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেয়া শুরু করে। এখন এই পরীক্ষা স্থায়ী হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদেশ থেকে হাজার কোটি ডলার আনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এনজিও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরুর আগে এই পরীক্ষার পক্ষে ব্যাপক ওকালতি করেছেন। পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে ভূয়সী প্রশংসা করে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো: আফছারুল আমীন ও প্রতিমন্ত্রী মো: মোতহার হোসেনকে পত্র দিয়েছেন।
কিন্তু সেই গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী এখন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার বিপক্ষে কথা বলছেন। এনজিও সমর্থক পত্রিকা ও টেলিভিশনগুলো রাশেদা কে চৌধুরীর এমন ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন তৈরি করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৫ খ্রিস্টাব্দে গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দেশের ৮৬ দশমিক ৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হয়েছে। আর ৭৮ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে কোচিং ছিল বাধ্যতামূলক। পাসের হার বাড়াতে খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করে লেখা এবং উত্তরপত্র মেলানোর জন্য শেষের ৪০ থেকে ৬০ মিনিট অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট পড়ার নির্ভরশীলতা বাড়ছে, পাঠ্যবইকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে গাইডবই। শিশুরা শেখার আনন্দ পেতে এবং সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে অভিভাবকেরা মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান গত বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকার যত দিন না সিদ্ধান্ত বদল করছে, তত দিন পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলবে।