জাতির অগ্রগতি ও উন্নতি নির্ভর করে একটি সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। আমাদের দেশে শিক্ষার হার এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত হতে পারেনি। শিক্ষা যেখানে সার্বিক উন্নতির পূর্বশর্ত, সেখানে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি করতে না পারলে ২০৪০ সালে বাংলাদেশ সরকার যে সাফল্য অর্জনের ঘোষণা দিয়েছে, তা আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এখনও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশিক্ষার উত্তম পরিবেশ নেই।
শিক্ষাব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেয়ার পথে নানা সমস্যা রয়েছে। পরীক্ষায় দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশাসনিক অবহেলা, শিক্ষাঙ্গনে মাদক, প্রযুক্তির অপব্যবহার ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করছে। পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার বৃদ্ধি পেলেও এইচএসসি পরীক্ষায় ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে শিক্ষার হার হতাশাজনক অবস্থা থেকে বের হতে পারছে না।
এত হতাশার মধ্যেও নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে আসার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর জানুয়ারির ১ তারিখে সারা দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও সমমানের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহাউৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দেয়ায় সরকার সব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। তবে গেল বছর এ বই বিতরণ উৎসবের দিন সব বিষয়ের পাঠ্যবই একত্রে হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। অথচ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে সরকার। তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন বই উৎসবের দিন সব বই একত্রে পাচ্ছে না? বই বিতরণে অনিয়ম কি তাহলে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে? মূলত বিষয়টি তা-ই। যেসব শিক্ষার্থী বই বিতরণের আগে বিদ্যালয় কর্তৃক ধার্যকৃত সেশন ফিসহ আনুষঙ্গিক ফি পরিশোধ করে না, তাদেরকে উৎসবের দিন বই দেয়া হয় না। এতে করে শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের মাঝে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বই উৎসবের দিন যারা নতুন বই হাতে পায়, তারা মহাআনন্দে প্রফুল্ল চিত্তে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে। কিন্তু যারা বই পায় না, তারা বাড়ি ফিরে বিষণœ মনে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কাঁদতে কাঁদতে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, সরকারের বিনামূল্যের বই টাকা দিয়ে আনতে হবে কেন? তাছাড়া বইয়ের সঙ্গে সেশন ফি’র সম্পর্ক কী? বিনামূল্যে বই বিতরণে সরকারের সাফল্য যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং সব শিক্ষার্থী যাতে ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে জানুয়ারির ১ তারিখে বই বিতরণের মহোৎসবের দিন নতুন বই হাতে পায়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।
আবুল কালাম আজাদ : প্রাবন্ধিক, শ্রীপুর, গাজীপুর
সৌজন্যে: যুগান্তর